সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Monday, 16 December 2024

মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় খাবারের নাম ও উপকারিতা

 


প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কি কি খাবার খেতে ভালোবাসতেন, সেসব খাবারের নাম, পুষ্টিগুণাগুণ ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সমূহ আপনাদেরকে জানাতে আজ আমি লিখতে বসেছি। এই আর্টিকেলে আমি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় খাবারের নাম এবং স্বাস্থ্যগত উপকারিতার দিকগুলো বর্ণনা করবো। চলুন সামনে এগিয়ে যায়: 


শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্যই নয়, নন মুসলিমদের কাছেও আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একজন আইডল। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আদর্শ আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপেই শিক্ষনীয়।
প্রতিনিয়ত আমরা সকলেই আমাদের খাদ্যাভাস নিয়ে কম বেশি চিন্তিত থাকি। ক্রমশই বাড়তি নানাবিধ রোগের শুধুমাত্র কারন অনিয়মিত ও অপুষ্টিজনিত খাদ্যাভাস। এক্ষেত্রে, একমাত্র সঠিক খাদ্য তালিকা বাস্তবায়ন খুব জরুরী।


বৈজ্ঞানিক গবেষনা মতে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর খাদ্যাভাস সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে যথাযথ উপযোগী। আমাদের প্রিয়নবীর খাদ্যাভাস জানলে সুন্নত তো মেনে চলা হবেই, সাথে মুক্তি মেলবে জানা-অজানা রোগসমুহ থেকে।
তাই, আমরা আজকের এই আর্টিকেল থেকে যা জানতে, বুঝতে  ও শিক্ষতে পারবো : 
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় খাবারের নাম। 
কুরআন ও হাদিসের আলোকে পুষ্টি ও গুনাগু


চিকিৎসাশাস্ত্র ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সেইসকল খাবারের পুষ্টি গুনাগুণ ও উপকারিতা।   
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় খাবারের তালিকা!
আমাদের নবীজী খেজুর, মিষ্টি, মধু, কিসমিস, লাউ, কালোজিরা, যয়তুন তেল, ডালিম, পানি, ভিনেগার,  মাশরুম ও আঙ্গুর খেতে বেশি পছন্দ করতেন। 
০১. খেজুর: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় খাবারের মধ্যে একটি হল খেজুর। সাধারনত, রোজা বা সিয়াম পালনের সময় প্রায়শই আমরা খেজুর আবশ্যক মনে করি। তবে কিছু হাদিস উল্লেখ করলে হয়ত দৈনিক খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করা শুরু করবেন।


কুরআন ও হাদিসের আলোকে খেজুর খাওয়ার গুরুত্ব : ব্ল্যাক ম্যাজিক বা জাদু টোনার প্রভাব রোধে, হজরত সাদ ইবনে আবি ওক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে ৭টি আজওয়া (উৎকৃষ্ট খেজুর) খেজুর খাবে, ওই ব্যক্তিকে বিষ ও জাদু-টোনা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
হৃদরোগ নিরসনেঃ হযরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে এসেছিলেন। তিনি আমার বুকের ওপর হাত রাখলেন তখন আমি হৃদয়ে শীতলতা অনুভব করলাম। তিনি বলেন, তোমার হৃদরোগ হয়েছে। এরপর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যেতে নির্দেশ দেন। অতঃপর বলেন, কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার ৭টি আজওয়া খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ,হাদিস: ৩৮৩৫)
প্রসুতি মায়ের প্রসব বেদনা নিরাময়ে : সুরা মারইয়ামের ২৫নং আয়াতে হযরত মারইয়াম (আ.) এর প্রসব বেদনার সময় আযওয়া খেজুরের গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।

 হযরত মারইয়াম (আ.) প্রসব বেদনায় কাতর হয়ে পড়েন এবং তখন তিনি খেজুর গাছের নিচে অবস্থান করেছিলেন। আল্লাহ্ তখন উনাকে লক্ষ্য করে বলেনঃ তুমি এই খেজুর গাছের কান্ড তোমার দিকে নাড়াও, দেখবে তা তোমার উপর পাকা ও তাঁজা খেজুর ফেলছে। (সুরা মারইয়াম-২৫)


চিকিৎসাশাস্ত্র ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে খেজুর খাওয়ার গুরুত্ব : খেজুরে বিদম্যান রয়েছে –
ভিটামিনঃ ভিটামিন ই-১, ই-২, ই-৩, ই-৫ ও ভিটামিন সি।
আয়রনঃ ৭.৩ মিলিগ্রাম।
কোলেস্টেরল ও চর্বিঃ ০.৬গ্রাম (প্রতি ১০০গ্রামে)
আমিষঃ ২.২ (প্রতি খেজুরে)
ক্যালসিয়ামঃ ৬৩ মিলিগ্রাম আঁশঃ ৩.৯ গ্রাম ( প্রতি ১০০গ্রামে)
আঁশঃ ৩.৯ গ্রাম ( প্রতি ১০০গ্রামে)


খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সমূহ :
খেজুর প্রোটিন এর চাহিদা পুরনে সহায়ক, যা মানবদেহের পেশি গঠনে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে।
দেহের দুর্বলতা রোধ ও তাৎক্ষণিক শক্তি সন্ঞ্চায়নে খেজুর অত্যাধিক কার্যকর।
খেজুরে বিদ্যমান এন্টি এক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশার কমাতে খেজুর সহায়ক ভুমিকা রাখে।
রক্তশুন্যতা কমাতেও রোজ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা মেলে।


দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রনসহ, রাতকানা রোগের জন্য ও খেজুরের উপকারিতা অনেক।
০২. কিসমিস: কিসমিস মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) রোজ সকালে খালি পেটে খেতেন৷ কিসমিস এর দারুন উপকারিতা ও কার্যকারিতা জানলে আপনিও খাদ্যাভাসে এই সুন্নত মেনে চলতে আগ্রহী হবেন। তবে চলুন জেনে নি, দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে কিসমিস এর গুরুত্ব।

কুরআন ও হাদিসের আলোকে কিসমিস খাওয়ার গুরুত্বঃ
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- ‘রাসূল (সা.) এর জন্য কিসমিস ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন।’ (মুসলিম)।
চিকিৎসাশাস্ত্র ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কিসমিস খাওয়ার গুরুত্ব :
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০গ্রাম কিসমিসে যেসব পুষ্টিগুন বিদ্যমান-
এনার্জি: ৩০৪ কিলোক্যালরি।
আয়রন: ৭.৭মিলিগ্রাম।
ক্যালসিয়াম: ৮৭ মিলিগ্রাম। 
সোডিয়াম: ২০.৪ মিলিগ্রাম।
কার্বোহাইড্রেট: ৭৪.৬ গ্রাম।
প্রোটিন: ১.৮ গ্রাম।
ফাইবার: ১.১গ্রাম।
ফ্যাট: ০.৩ গ্রাম।


কিসমিসের যত উপকারিতা :
সকালে কিসমিস ভেজানো পানি খেলে ক্ষতিকর কোলেস্টরল এড়িয়ে সুস্থভাবে ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
ক্যান্সারে উৎপন্ন ফ্রি র্র্যাডিকলগুলোকে ধ্বংস করে কিসমিসে থাকা ক্যাটেচিন নামক এন্টি অক্সিডেন্ট।
খাবার হজমে সাহায্য করে এবং শরীরের পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে।
হাড়ের গঠনে সহায়তা করে।
দৈনিক কিসমিস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।


০৩. লাউ বা কদু : লাউ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আরেকটি প্রিয় খাবার। দৈনিক খাদ্যাভাসে লাউ বা কদু রাখতে নিম্নের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো কাজে দিবে।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে লাউ এর গুরুত্ব : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রসুল (সা.)-কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসুল (সা.)-এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসুল (সা.) প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি। (মুসলিম, ২০৬১; বুখারি, ৫০৬৪)

চিকিৎসাশাস্ত্র ও পুষ্টিবিজ্ঞানের ভিত্তিতে লাউ খাওয়ার উপকারিতা :
  


প্রতি ১০০ গ্রাম লাউ এর পুষ্টি গুনাগুন পরিমান নিচে উল্লেখ করা হলো: 
এনার্জি: ১৪কিলোক্যালরি।
কোলেস্টেরল:- ০ মিলিগ্রাম।
আয়রন:- ০.২ গ্রাম।
পটাশিয়াম:- ১৫০ মিলিগ্রাম।
ম্যাগনেসিয়াম:- ১১মিলিগ্রাম।
প্রোটিন: ০.৬২ গ্রাম।
শর্করা: ৩.৩৯ গ্রাম।
ভিটামিন সি: ১০.১ মিলিগ্রাম।
জিংক: ০.৭মিলিগ্রাম।
আঁশ: ০.৫ গ্রাম। 

কেন লাউ খাবেন? লাউ খাওয়ার নিম্নোক্ত কারণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
লাউ এ বিদ্যমান ফ্যাট ও ক্যালরি তুলনামুলক কম রয়েছে, যা স্থুলতা কমাতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল এর পরিমান কম হওয়াতে দৈনিক লাউ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে লাউয়ের উপকারিতা অনেক।
লাউ এ অত্যাধিক পরিমান পানি (৯০%) থাকে, যা দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে ভুমিকা রাখে


কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের মত রোগ প্রতিরোধে লাউ কার্যকর ভুমিকা রাখে।
০৪. কালোজিরা: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কালেজিরাকে মৃত্যু ছাড়া সর্ব রোগের ঔষুধ বলেছে। কালেজিরাকে খাদ্য তালিকায় রাখতে এর থেকে বড় কারন হয়ত আর দেওয়া প্রাসঙ্গিক না।

হাদীসের আলোকে কালোজিরা এর গুরুত্ব : আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কালোজিরায় মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের ওষুধ রয়েছে। ’ (বুখারি : ৫৬৮৭, মুসলিম : ২২১৫)
চিকিৎসাশাস্ত্র ও পুষ্টিবিজ্ঞানের ভিত্তিতে কালোজিরার পুষ্টি গুণাগুণ : প্রতি ১০০ গ্রাম কালোজিরায় পুষ্টি উপাদান-
এনার্জি: ৩৪৫ ক্যালরি।
কোলেস্টেরল : ০মিলিগ্রাম। 
চর্বি: ১৫গ্রাম।
সোডিয়াম: ৮৮ মিলিগ্রাম।
পটাশিয়াম : ১৬৯৪ মিলিগ্রাম।
প্রোটিন :১৬গ্রাম। 


কালোজিরার উপকারিতা :
দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পরিয়ড চলাকালীন ব্যাথা এড়াতে খুবই কার্যকর।
প্রসুতি মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সহায়তা করে।
চুলে ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হয়।
স্মরনশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মানসিক সমস্য দুরীকরনেও কার্যকর ভুমিকা রাখে।
আরও জানতে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম লেখাটি পড়তে পারেন।   
০৫. মিষ্টি বা মধু : মিষ্টি বা মধু আমাদের প্রায় সকলেরই পছন্দের। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মিষ্টান্ন খুব পছন্দের ছিল। সুন্নত পালনের স্বাস্থ্যের উপকারে মিষ্টান্ন বা মধুর উপকারিতা নিচে জেনে নেয়া যাক,
হাদীসের আলোকে মিষ্টান্ন বা মধু এর গুরুত্ব :
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন।’ (বোখারি : ৫১১৫; মুসলিম : ২৬৯৫)।
বোখারি শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ।’

চিকিৎসাশাস্ত্র ও পুষ্টিবিজ্ঞানের ভিত্তিতে মধুর পুষ্টি উপাদান : প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে পুষ্টিগুন উপাদান রয়েছে-
এনার্জি- ১২৭২ ক্যালরি।
ভিটামিন সি- ০.৫ মিলিগ্রাম।
শর্করা- ৮২.৪ গ্রাম।
স্নেহ- ০ গ্রাম।
প্রোটিন-০.৩ গ্রাম।
ক্যালসিয়াম- ৬মিলিগ্রাম।
আয়রন- ০.৪২ মিলিগ্রাম।
পটাসিয়াম- ৫২ মিলিগ্রাম।
জিংক- ০.২২ গ্রাম। 

মধুর উপকারিতা :
মধুতে বিদ্যমান আয়রন শরীরে রক্তশুন্যতা রোধ করে।
হাড় গঠনে মধুতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ভুমিকা রাখে।
মধুতে বিদ্যমান ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে।
দেহে শক্তি সন্ঞ্চয় করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও সারিদ, মাখন, বার্লি, মুরগী, বেদানা-ডালিম, জলপাই,মাশরুম, আঙ্গুর, ভিনগার এর মত অনেক খাবারই মহানবী হযরত মুহাম্মদ( সাঃ) এর খাদ্যাভাসে থাকতই।
মুলত, আমি প্রধান খাদ্যগুলোর উপকারিতা ও গুরুত্ব লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। আশা করি, সুস্বাস্থ্য বিবেচনায় খাবারসমুহের গুনাগুন ছাড়াও সুন্নত পালনে সকলেই মনোনিবেশ করবেন। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি।আসসালামু আলাইকুম।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: