হ্যাঁ, রাতে পাচ ঘণ্টার কম ঘুম একাধিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সাধারণত ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের সময় কম হলে তা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণ হতে পারে। নিচে কয়েকটি রোগের ঝুঁকি উল্লেখ করা হলো, যেগুলি কম ঘুমের কারণে বেড়ে যেতে পারে:
১. হৃদরোগ:
যারা রাতে নিয়মিত কম ঘুমান, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঘুমের অভাব উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের অসুখ, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যাগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত।
২. ডায়াবেটিস:
গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া কমে যায়, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কম ঘুম শরীরের মেটাবলিজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, যা পরবর্তী সময়ে উচ্চ রক্তে শর্করার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা:
ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করে। এটি মনোযোগ, স্মৃতি, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া দীর্ঘদিন কম ঘুম মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৪. ওজন বাড়ানো:
কম ঘুমের কারণে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, বিশেষত গ্রীলিন এবং লেপটিন, যা খিদে নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই হরমোনগুলির ভারসাম্য নষ্ট হলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে এবং এর ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
৫. ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া:
ঘুমের অভাব ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করতে পারে, যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এটি সংক্রমণ এবং বিভিন্ন ধরনের অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. অবসাদ এবং মানসিক চাপ:
কম ঘুম মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ এবং হতাশার মতো মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে মনোসংযোগ কমে যায় এবং চাপের প্রভাব শরীরেও পড়তে পারে।
৭. ক্যানসারের ঝুঁকি:
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘুমের অভাব দীর্ঘকালীনভাবে কিছু ধরনের ক্যানসারের (যেমন স্তন ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার) ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এটি সম্ভবত ঘুমের সময় শরীরের পুনর্নির্মাণ এবং রিপেয়ার প্রক্রিয়ার বাধা সৃষ্টি করার কারণে হয়।
৮. ডিপ্রেশন:
কম ঘুম এবং দীর্ঘমেয়াদী নিদ্রাহীনতা ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে বা ডিপ্রেশনের লক্ষণকে আরও খারাপ করতে পারে। ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে, যা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
উপসংহার:
রাতে পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুম একাধিক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ায়, এবং এটি শরীরের সাধারণ কার্যক্ষমতা, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাকেও প্রভাবিত করে। তাই, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।
0 coment rios: