Sonar Bangla blog: সাহিত্য

সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu
Showing posts with label সাহিত্য. Show all posts
Showing posts with label সাহিত্য. Show all posts

Monday, 16 December 2024

মেয়েদের নেফাস সম্পর্কে গোপনীয় মাসআলা।

মেয়েদের নেফাস সম্পর্কে গোপনীয় মাসআলা।

 


মেয়েদের নেফাস যা বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে শুরু হয়। আর তাই বিবাহিত নারীদের নেফাস সম্পর্কিত অতি গোপনীয় মাসআলাগুলি জানা বুঝা ও শিখা খুবই জরুরী। কিন্তু ইসলামি জীবন যাপনে অভ্যস্ত নন এমন নারীরা জানার সুযোগ না থাকার কারণে কিংবা লজ্জা ভয়ের কারণে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাগুলি জানতে ও বুঝতে পারে না। 

 তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। 
নেফাস সম্পর্কে গোপনীয় মাসআলা

মাসআলা : ৭৫. বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পর যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাকে শরীয়তের পরিভাষায় নেফাস বলে।
মাসআলা : ৭৬. নেফাসের সর্বোচ্চ সীমা ৪০ দিন; তদপেক্ষা বেশি দিন রক্ত আসলে তা নেফাস নয় বরং তা ইস্তিহাযা।
মাসআলা : ৭৭. নেফাসের সর্বনিম্ন সময়ের কোন সীমা নেই। একদিন বা সামান্য সময়ের জন্যও উহা আসতে পারে। বরং যদি সন্তান জন্মের পর এক ফোঁটা রক্তও না আসে তাও সম্ভব।


মাসআলা : ৭৮. সন্তান প্রসবের পর সর্বাবস্থায় গোসল করা ওয়াজিব। রক্ত আসলে রক্ত বন্ধ হওয়ার পর আর রক্ত না আসলে নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পর।
মাসআলা : ৭৯. এ সময় যদি গোসল করায় কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে অথবা গোসল করার সাহসই না হয় তবে গোসলের নিয়তে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে। পরে হিম্মত আসার পর বা অসুস্থতার আশংকা কেটে গেলে গোসল করবে।


মাসআলা : ৮০. জমজ দুই শিশু প্রসব হলে প্রথম বাচ্চা থেকেই নেফাস গণনা করা হবে।
মাসআলা : ৮১. অস্ত্রপচার(সিজার) করে বাচ্চা বের করা হলে যদি লজ্জাস্থান থেকেই রক্ত আসে তবে তাকে নেফাসই মনেকরা হবে। অন্যথায় উহা নেফাস নয়।
মাসআলা : ৮২. নেফাসের রক্ত বন্ধ হয়ে হায়েয শুরু হওয়ার মাঝে কমপক্ষে শরয়ী নিয়ামানুযায়ী ১৫ দিন পবিত্র থাকা জরুরী। যদি ১৫ দিনের পূর্বেই হায়েয আসে তবে তা হায়েয নয় নয় বরং ইস্তিহাযা।
নেফাস অবস্থায় নামাজ
মাসআলা : ৮৩. নেফাসের সময় নামায মাফ হয়ে যায়। উহা আর আদায় বা কাযা কিছুই করা লাগে না।
মাসআলা : ৮৪. যখনই সময় ফরয হবে তখনই গোসল করে নামায শুরু করে দিবে। সময় থাকলে তা আদায় নামায হিসেবে গণ্য হবে নচেৎ কাযা হবে।
মাসআলা : ৮৫. নামাযের ওয়াক্ত সামান্য সময় বাকী থাকলে সুন্নত ছেড়ে দিয়ে ফরয পড়ে নিবে।


মাসআলা : ৮৬. ফরয এবং ওয়াজিব (যেমন বেতর) নামাযেরই কেবল কাযা আছে; সুন্নতের কাযা নেই। অবশ্য কারো ফজরের নামায কাযা হয়ে গেলে এবং সে (সূর্য) ডুবার পূর্বে উহার কাযা করলে ফজরের সুন্নতও পড়বে।
নেফাস অবস্থায় রোযা
মাসআলা : ৮৭. নেফাস অবস্থায় রোযা রাখবে না। তবে পবিত্র হওয়ার পর কাযা করা জরুরী।


মাসআলা : ৮৮. রোযা অবস্থায় নেফাস আসলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং পরে উহার কাযা আদায় আবশ্যক হবে।
মাসআলা : ৮৯. গোসল করতে পারে এতটুকু সময় থাকা জরুরী তবে গোসল করা জরুরী নয়। কারণ সুবহে সাদেকের পরে গোসল করলেও কোন ক্ষতি নেই।
মাসআলা : ৯০. গর্ভবতী রোযাদার মহিলার যদি রোযার কারণে বাচ্চার জীবনাশংকা হয় তবে রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয।
মাসআলা : ৯১. গর্ভবতী অথবা দুগ্ধপানকারিনী মহিলারা নিজের বা স্বীয় বাচ্চার জীবনশংকা থাকলে রোযা রাখবে না। পরবর্তী সময় কাযা করবে।
নেফাস শেষ হবার পর গোসলের নিয়ম
মাসআলা : ৯২. নেফাসের গোসলের ঐ একই পদ্ধতি যা পূর্বে হায়েযের গোসলে বর্ণিত হয়েছে।

মাসআলা : ৯৩. জানা গেছে যে, অনেক জায়গায় মহিলাগণ নেফাসের ৪০ দিনের অনেক পূর্বে রক্ত বন্ধ হয়ে গেলেও নেফাসের দিনগুলোর পূর্ণ ৪০ দিন পর্যন্ত নেফাসের অবস্থায়ই কাটায় এবং নিজের এবং নিজেকে নাপাক মনে করে। এটা একেবারেই অনুচিত। এভাবে থাকা নাজায়েয এবং হারাম। বরং যখনই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় আর রক্ত আসার সম্ভাবনা না থাকবে তখনই গোসল করে নামায শুরু করবে।


উৎস : নারীর শ্রেষ্ঠ উপহার বই থেকে সংগ্রহিত। 
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা করি মেয়েদের নেফাস সম্পর্কিত মাসআলা গুলি জেনে আপনাদের ভালো লেগেছে এবং এটি ইসলামিক জীবন যাপনে মুসলিম নারীদেরকে সাহায্য করবে। এটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

আদর্শ নারী – একজন আদর্শ নারী হওয়ার উপায়

আদর্শ নারী – একজন আদর্শ নারী হওয়ার উপায়

 


উত্তপ্ত মরুভুমিতে যেমন পথিক তৃষ্ণা মেটাতে পানি খুজতে বার বার ব্যর্থ হয়, ঠিক তেমনি নারীর উন্নয়নের জোয়ারে বিশ্ব ভাসলেও আদর্শ নারীর দেখা পাওয়া বড় দায়! সমাজ আজ আপেক্ষিকভাবে বৈষম্য দুর করতে গিয়ে পুরুষের চেয়ে নারীর তিনগুন সম্মানকে কমিয়ে এনেছে সমানতার কাঠগোড়ায়! ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে একজন নারীর সম্ভ্রান্ত পরিচয়, প্রকৃত মুমিনা হওয়ার স্পৃহা, একটি আদর্শ প্রজন্ম উপহার পাওয়ার ভবিষ্যৎ ও!


আজ মুল্যবান মুমিনা হয়ে পড়েছে পথের ধারে হিংস্র মানুষদের লোভ লালসা পুরনের চাহিদা বস্তু! আজ তাদের আদর্শ সো কল্ড পশ্চিমা বিশ্বের সংস্কৃতি! ফলে সমাজে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে মেয়েদের উচ্ছৃঙ্খল চলাফেলা, পারিবারিক অশান্তি, পরকীয়া, ধর্ষন এমনকি ডিভোর্স সহ নানান রকম ফেতনা!
তাই, একজন মুসলিমাহ্ হিসেবে আমাদের নারীদের আদর্শ হওয়া চাই নবী রাসুলের যুগের বিবি ও মহিলা সাহাবীরা! ফেতনার যুগে একজন আদর্শ নারী হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি! একজন মুল্যবান মুসলিমাহ্ হয়ে দুনিয়া ও আখিরাত সুন্দর করতে আদর্শ নারী হয়ে উঠার দৃঢ় সংকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে ইসলাম জীবনব্যবস্থাইএকমাত্র সফলতার মুল মন্ত্র।
ইসলামে আদর্শ নারী কারা


যুগে যুগে মানুষকে সঠিকপথে পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়াতে নবী রাসুল প্রেরন করেছেন৷ তাঁরা ছিলেন ভ্রান্ত মানুষদের সঠিকপথে পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা পাঠানো পথপ্রদর্শক। একজন মানুষ হিসেবে আমাদের আদর্শ শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)! তবে, প্রশ্ন হচ্ছে একজন মুসলিমাহ্ হিসেবে আমাদের কোন নারীদের আদর্শ হিসেবে মানতে হবে? আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এমন বেশ কয়েকজন আদর্শ মুসলিম নারীদের কথা বলেছেন! এছাড়া, নবী-রাসুলদের জীবনী ও ইসলামি ইতিহাস থেকে আমরা আদর্শ নারী হিসেবে বহু সাহাবীদের দৃষ্টান্ত অনুধাবন করতে পারি! নিম্নে উল্লেখযোগ্য ৫ সাহাবীদের উত্তম আখলাক ও গুনাবলি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
হযরত খাদিজা (রা)


একজন মুসলিম নারীর আদর্শ হতে পারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর প্রথম ও প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা), যিনি আমাদের প্রিয়নবীর কঠিন সময়ের সঙ্গী ছিলেন! নারী হিসেবে প্রথম ইসলাম কবুলকারী ছিলেন হযরত খাদিজা(রা)! নব্যুয়ত ও তার পরবর্তী সময়ে মক্কার কাফেররা মহানবী (সা) এর বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র, মিথ্যা অপবাদ ও নির্যাতন চালাতো। অথচ, স্ত্রী খাদিজা (রা) এর উত্তম আখলাক ও ভালোবাসা সেসময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ব্যাথিত হৃদয়ে আবারও দৃঢ় বিশ্বাস যোগাতো৷ যেসময় গোটা দুনিয়া নবীজির বিরুদ্ধে ছিলেন, সেসময়ে হযরত খাদিজা তার পাশে ছায়া হিসেবে ছিলেন।


৪০ বছর বয়সের একজন বিধবা নারীর জন্য ২৫ বছরের একজন যুবকের হৃদয়ে এতই ভালবাসা সৃষ্টি করেছিলেন যার কারনে প্রিয়নবী তার মৃত্যুশোকে সবথেকে বেশি ব্যথিত হয়েছিলেন৷ তিনিই একমাত্র স্ত্রী যার জীবদ্দশায় মহানবী (সা) আর কোন বিবাহ করেননি। ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে হযরত খাদিজা (রা) এর স্বামী ভক্তি, বিপদে স্বামীর ঢাল, আর্থিক সহায়তা, হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ধৈর্যধারন, ইসলাম প্রচারনায় সাহস ও অনুপ্রেরনা দেওয়া সকল কিছুই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
হযরত আয়েশা (রা)


হযরত আয়েশা বিনতে আবু বকর সিদ্দিক কে বলা হয় উম্মুল মুমিনীন অর্থাৎ বিশ্বাসীদের মাতা! আয়েশা (রা) এর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, বিচক্ষন, বুদ্ধিমতী ও দ্বীনি ইলমে পান্ডিত্যের অধিকারী৷ তিনি রাসুল (সা) এর প্রিয়তমা স্ত্রী যিনি মহিলা সাহাবীদের মধ্যে সর্বোচ্চ হাদিস বর্নাকারী (সর্বমোট ২২১০টি)।এছাড়া তিনি তাফসির, হাদীস, ফিকহ ও আরবী সাহিত্যে অসাধারন ইলমের অধিকারী ছিলেন।মুনাফিকদের কুৎসা রচনায় আয়েশা (রা) চরিত্র ও পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কুরআন মাজীদে সুরা নুর এ আল্লাহ্ তা’আলা স্বয়ং তাঁর উত্তম ও আখলাক ও পবিত্রতা সম্পর্কে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন! সুবহানাল্লাহ!আয়েশা (রা) এর দানশীলতার ব্যাপারে ও নজির আছে। একজন কিশোরী স্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সংসার সামলানো, স্বামীর আনুগত্য, হাদিস শাস্ত্রে অবদান নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়।
হযরত ফাতেমা (রা)


হযরত ফাতেমা (রা) ছিলেন আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর পৃরিয় কন্যাসন্তান! যিনি হবে নারীদের জান্নাতের সর্দার! হযরত ফাতেমা (রা) এর জীবনীর যে বিষয়টি বড় শিক্ষামুলক তা হলো ‘ অল্পে তুষ্ট’ এবং “সাদামাটা জীবন”। হযরত ফাতেমা (রা) গৃহস্থালির সকল কাজ নিজে করতেন। তার সংসার জীবনে প্রচুর সংগ্রাম ও আর্থিক দুরাবস্থা থাকলেও দাম্পত্য জীবনে আলি রা) ও ফাতেমা রা এর অগাধ ভালোবাসা, সম্মান ও বিশ্বাসের নজীর চোখে পড়ে।
আরবের সম্ভ্রান্ত বংশ ও শ্রেষ্ঠ মানবের কন্যা হয়েও তিনি প্রাচুর্যের জীবনে গা ভাসান নি! বিশ্বনবী (সা) এর এই আদর্শ কন্যা আল্লাহর ইবাদতে সর্বদাই মশগুল থাকতেন। পর্দার ব্যাপারে তিনি ছিলেন বরাবরই কঠোর স্বভাবের! মৃত্যুর আগে তার পরিয়াদ ছিল, তাঁকে যেন রাতে দাফন করা হয় যাতে তার শরীরের অবয়ব কেউ বুঝতে না পারে- এই ছিল ফাতেমা (রা) এর পর্দা!


ফাতেমা রা ছিলেন খুবই দানশীল! তিনদিন ধরে অভাব অনটনের সময় এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক আসলে তিনি তাঁর গলার হার বৃদ্ধাকে বিক্রির জন্য দিয়ে দেয়! হযরত ফাতেমা রা পিতার আদুরের দুলালি তো ছিলেন সাথে পিতার আদেশ ও নিষেধ সবসময় মেনে চলতেন৷
হযরত আছিয়া (রা)
আছিয়া রা ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে বড় জালেম ফেরাউনের স্ত্রী! একজন পথভ্রষ্ট, জালেম ও কঠোর শাসকের পত্নী হওয়া স্বত্ত্বেও আছিয়া (রা) ছিলেন আল্লাহ্ ভীরু একজন নেককার মুমিনা। বিশাল প্রাসাদ, সম্রাজ্রের মাঝে থেকেও আছিয়া রা সর্বদাই ছটফট করতেন৷ তিনি লোভ লালসা , প্রাচুয্যের মাঝেও এক আল্লাহ্ তা’আলা এর একত্ববাদে সদা অটল ছিলেন। ফেরাউনের অত্যাচার,জুলুম, নির্যাতনে তিনি ধৈযহারা হয়ে পড়েননি। বরং সবদা আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন এভাবে-


হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ১১)
জান্নাতবাসীদের মধ্যে সুসংবাদপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ নারীদের মধ্যে আছিয়া রা অন্যতম! তার সততা, আল্লাহ্ ভীরু, ইমানের প্রজ্জলিত শিখা প্রতিটি মুমিনা নারীর জন্যই আদর্শ!
হযরত মরিয়ম (আ)


হযরত মরিয়ম (আ) ছিলেন ইসা (আ) এর মাতা, যার জীবনী থেকে আল্লাহর ফায়সালার উপর তাওয়াক্কুল, বিপদাপদে ধৈর্যধারন ও ইবাদতে মশগুল থাকার মত আদর্শ গুনাবলিগুলো প্রতীয়মান হয়। ইনি সেই মহান স্বত্তার জননী ও নারীদের আদর্শ যাঁর নামে মরিয়ম নামে আল্লাহ্ তা’আলা একটি সুরা নাযিল করেন।
মারিয়াম (আ) ছিলেন পুত পবিত্র, শালীন নারী এবং তিনি ঘরের এককোনে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তিনি পর্দা রক্ষা করতেন৷ এসকলকিছু আল্লাহ্র এতই পছন্দ হন যে তাঁর জন্য ইসা (আা) এর মত নবীকে মনোনিত করলেন!


আল্লাহর কুদরতে মরিয়ম (আ) কোনরকম স্বামী সঙ্গ ছাড়া শিশু ইসা (আ) কে জন্ম দেন৷ এই সময় তিনি ভয় ও সংশয়ে নিজের পবিত্রতা নিয়ে বারংবার আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। তার সংযম এত বেশি ছিল যে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষদের অপবাদ, তিরস্কার সহ্য করতে থাকেন। অত:পর আল্লাহ স্বয়ং তার পবিত্রতা নিয়ে স্বাক্ষ্য দেন-“আর সেই নারী যে তার পবিত্রতা রক্ষা করেছিল, আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে প্রাণ ফুঁকে দিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য নিদর্শন বানালাম।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯১)
নারীবাদী বা ফেমিনিষ্টদের নারী উন্নয়নের ফাঁদ:


ইতোপূর্বে আমরা প্রসিদ্ধ নারী সাহাবীদের জীবনী পরলেও বাস্তবে আমরা ভাবতে পারি তা এখন কি আর সে যুগ আছে? তখন নবী রাসুলের যুগে মানায়! এখন আধুনিক যুগ! এই যুগে নারীবাদীরা “নারী” শব্দটিকেই পুরুষ শব্দে বারবার বিভাজন করছে। একজন নারীকে এখন নারীবাদীরা শিখাচ্ছে কিভাবে পুরুষদের মত পোশাক পড়া যায়, কিভাবে তাদের সাথে কর্মস্থলে সমান তালে কাজ করা যায়! কিভাবে নারীরা নিজেদেরকে প্রদর্শনী রুপে সোশ্যাল মিডিয়া সহ রাস্তা ঘাটে প্রমোট করবে! এগুলোই নাকি নারী উন্নয়ন!
সংস্কৃতি ও বাঙালিত্বের দোহাই দিয়ে আজ সমাজে নারীদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ানো হচ্ছে। ইসলামে বিধি নিষেধের ধারে কিনারে তো তারা নেই ই, বোনদের আজ নারীবাদীরা নিজেদের কুলষিত পথে জড়িয়ে নিচ্ছে। এখন মা বোনেরা আর সংসার নিয়ে ভাবেনা! এখন মা বোনেরা সংসার সামলিয়ে জব ও করেনা! তারা হয়ে গেছে স্বাধীন কর্মজীবি! তারা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে! তারা স্বাধীনভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো জাহিলিয়াতি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় আগে যেমন শালীন মেয়ে দেখলে বোঝা যেত এই মেয়ে সম্ভ্রানৃত ঘরের ই মেয়ে। কিন্তু আজ রাস্তায় পশ্চিমা বিশ্বের হুবুহ চলাফেলরা হরহামেশাই দেখতে পাবেন।


আজকাল পন্যের নামিদামি বিজ্ঞাপন হোক অথবা হোক কোন গাড়ির শোরুমের ব্যানার! পুরুষ আর মডেল হয়না! মডেল হয় নারী! কারন নারীরাই পারে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে। দিনের পর দিন এভাবে নারীদেরকে নারী উন্নয়নের মিথ্যা ফাঁদে ফেলা হচ্ছে এবং তাদের সম্ভ্রম, শালীনতা, সৌন্দর্যের বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে।


বর্তমান ফেতনায় আদর্শ নারী হওয়ার উপায়:
আজকের সমাজে দ্বীনি পরিবেশ পাওয়া বড় দায়! ফেতনার এই যুগে নারীদের আদর্শ যখন হয়েছে পশ্চিমা সভ্যতার সংকৃতি তখন ছোট কন্যাসন্তান থেকে একজন বৃদ্ধা নারী ও অনিরাপদ সমাজে বাস করছে। সমাজের কাছে পর্দার আড়ালে থাকা একজন দ্বীনি বোন আগেকার বর্বরতার যুগের পুরুষশাসিত নারী! স্কুল কলেজ, ভার্সিটিতে হিজাব পরিহিতা নারীদের পড়তে হয় নানা রকম অসহায় অবস্থায়! এই সকল পরিস্থিতি দ্বীন ও ইলম চচা হতে পারে একমাত্র সমাধান! নিম্নোলিখিত কিছু উপায় মেনে চললে ফেতনাময় সমাজে দ্বীন ও আদর্শ দরে রাখা সম্ভব-


ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা
দুনিয়াবি ও আখিরাতে সাফল্য অর্জনের চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য হওয়া! ফরজ বিধানসমুহের পালনে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথ আদায় করবে; রমজানের রোজা ঠিকভাবে রাখবে; (নিজেদের) সতীত্ব রক্ষা করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে; সে নারীকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ কর।’ (মুসনাদে আহমদ)।
সঠিক পর্দা পালন


শুধু হিজাব পেঁচিয়ে আধুনিক পর্দা কখনো আল্লাহর দেয়া নির্দেশ পালনের সাথী হতে পারে না! পরিপূর্ণ পর্দা করার পাশাপাশি ফ্রি মিক্সিং ও নন মাহরামের সাথে গল্পগুজব ও এখনকার কালচার। এই কালচারে আপনি নিজের রবের সন্তুষ্টি হারাবেন এবং ইসলাম সম্পর্কে একধরনের ফেতনা সৃষ্টি করবেন! তাই, সঠিক পর্দা পালনে তৎপর হতে হবে।
উত্তম আখলাক আয়ত্বকরন
উত্তম আখলাক সবদাই একজন মুমিনার আমলনামা ভারী করবে। পরিবার, প্রতিবেশী ও সকল স্তরে উত্তম আখলাকের কারনে একজন মুসলিমাহ্ সম্মানিত হতে পারে। এচাড়া আখিরাতে ও আছে এর উত্তম প্রতিদান-কেয়ামতের দিন মিযানের পাল্লায় সচ্চরিত্র সবচে বেশি ওজনী ও ভারী হবে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২০০২
দ্বীনি বান্ধবী বাছাইকরন


কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ! তাই প্রত্যেক যুবতী বা নারীর উচিত বেদ্বীন মানুষদের সঙ্গ ত্যাগ করে, আল্লাহভীরু বান্ধবীদের সাথে বন্ধুত্ব করা। যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরন হবে, তারাই দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত বন্ধু! এর ফলে পাপকাজ তেকে যেমন রেহাই পাওয়া যায় তেমনি আখিরাতের কথাও বেশি বেশি স্মরন হয়। ফলে ইমান দৃঢ় হবে
আত্ন সংযম ও ধৈযধারন
যুগপোযোগী কালচারকে না বলে নারী যখন ইসলাম অনুশাসনে চলবে বাধা বিপত্তি আসবেই! কটুক্তি, হিংসা, নিন্দা, অপবাদ দিয়ে আশেপাশের মানুষ কষ্ট দিবে। তাই, আল্লাহর পরীক্ষা ভেবে সকলকিছুতে ধৈর্যধারনক্ষমতা রাখতে পারলে নারীদের জন্য ব্যাক্তিগত, পরিবার ও সমাজে চলা সহজতর হবে।
উচ্চাকাঙ্খা পরিহার


জীবন যত সাদামাটা ততই দুনিয়া জীবন সহজতর হবে! তাই, সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন ও সল্পে তুষ্ট থাকতে হবে! নবী ও সাহাবাদের জীবনী থেকে সাদামাটা জীবনে থেকে ধৈর্য ও কষ্টের পর ও আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান ও প্রশান্তির যে আলোকদীপ্ত জ্বলজ্বল করে, তা শিক্ষা নিতে হবে।
পরিবার ও সমাজ গঠনে আদর্শ নারীর ভুমিকা:
জন্মের সুচনালগ্ন থেকে একটি শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, বুদ্ধিমতা, দ্বীনি শিক্ষা সকল কিছুরই হাতেখড়ি হয় একজন মায়ের দ্বারা। একজন আদর্শ মা বিকাশ ঘটাতে পারে আদর্শ প্রজন্ম। মায়ের অনুকরনেই ছোট্ট শিশু দিব্যি বেরে উঠে! এখন, একজন নারীর আখলাক যদি উত্তম হয় এবং তিনি যদি দ্বীন পালনে সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন, তবে শিশু ও এসব শিখবে।


পক্ষান্তরে, একজন মায়ের মন্দ আচরন এবং মুর্খতা শিশুমনে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে! আবার, একজন ফুল টাইম জবহোল্ডার মা যতই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেয়ার টেকার রাখুক! বাচ্চার নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সাথে তার সহজাত প্রবৃত্তি হবে ঠিক সেই কেয়ার টেকারের অনুকরনে।
একজন কন্যাসন্তান হিসেবে মা বাবার অবাধ্য মেয়ে থেকে অবশ্যই বাবা মায়ের অনুশাসন মেনে চলা মেয়েসন্তান অত্যধিক উপকারী!
কথায় আছে, সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে!স্বামীর আনুগত্যে করা, পরিবারের সকলের দেখাশোনা করা, বিপদাপদে ধৈযধারন, সাংসারিক কাজকর্মে নিখুত বিচক্ষনতা, পরিবারের অসুস্থদের সেবা শুশ্রূষা প্রতিটি পদক্ষেপএকজন আদর্শ নারীই পারে সংসারে প্রশান্তি আনতে।


আত্নীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা, প্রতিবেশীদের খোঁজখবর রাখা, অসহায় দুস্থদের দান করা এসকল কিছুই তার উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য!
শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে আদর্শ নারী:
শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্র আদর্শ নারীদের হিতের বিপরীতে তা কিন্তু নয়! অনেকে মনে করে ইসলামে যেহেতু নারীদের বাসায় সংসারের কাজ করতে বলেছে, তবে নারীদের উচ্চশিক্ক্ষার কি দরকার! নারীরা শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে মানবকল্যানে অত্যাধিক ভুমিকা রাখতে পারে৷
নারী চিকিৎসক ও নার্স: আজকাল গ্রামে গন্জে এখনও নারী চিকিৎসক ও নার্সের বড়ই অভাব।ফলে, কঠিন পর্দা করা বোনেরা পুরুষ ডাক্তারের কাছে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে আদর্শ নারীরা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে, নারী পেশেন্টদের চিকিৎসা দিয়ে দ্বীনি কাজে নিজেকে সামিল করতে পারে।
মহিলা শিক্ষিকা: আজকাল গার্লস স্কুল, মাদ্রাসা কিংবা কলেজগুলোতে মহিলা শিক্ষিকার বড়ই অভাব! শিক্ষকদের কাছে অনেক হেনস্তার কথাও প্রায়শই পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে পাওয়া যায়! এভাবে, সমাজে শৃঙ্খলতা, শালীনতা ও মেয়েদের নিরাপত্তা জোরদার করতে নারীরা পারে পর্দার আড়ালে থেকে পাঠদানে নিজেকে নিযুক্ত করতে।


একজন নারী কুরআনের আলেমা ও হাফেজা হয়ে মাদরাসায় পাঠদানের পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষিত বোনদের মাঝে কুরআন ও দ্বীনি শিক্ষার প্রচারে অকল্পনীয় অবদান রাখতে পারে।
উদ্যোক্তা: সামাজে দুস্থ, বিধবা ও অসহায় নারীদের নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে সমাজের দুস্থ মানুষদের জন্য উপকারে আসতে পারে একজন আদর্শ নারী।
দর্জি: একজন আদর্শ নারী অবশ্যই চাইবেনা তার শরীরের মাপ একজন পুরুষ জানুক! নিজের পোষাক নিজের স্বাছন্দ্য অনুযায়ী সেলাই করে রুচিশীলতার পরিচয় যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি অন্যবোনদের পোষাক সেলািয়ে পাওয়া যাবে বাড়তি উপার্জনও! আর মুল উদ্দেশ্য যদি হয় কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তবে দুনিয়া ও আখিরাতে তো উপহার থাকছেই!
পরিশেষে,

 যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দুনিয়া ও আখিরাত হারানো একজন মুমিনার বৈশিষ্ট্য হতে পারেনা। একজন আদর্শ নারী ই পারে পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কল্যানকর প্রজন্ম উপহার দিতে হবে। আদর্শ নারীর উত্তম আখলাক ও গুনাবলি হতে পারে আরও বেদ্বীন বোনদের দ্বীনে ফেরার মুল কারন! একজন মুসলিমাহ্ তার আদর্শের বলে পারিপাশ্বিক সকল স্থিরতা, অন্যায়, অবিচার রুখে দিতে পারে। পরিশেষে, রবের সন্তুষ্টি যে একজন আদর্শ নারীর ছায়াতল, যে ছায়াতলে আদশ নারী হতে পারে সকল কল্যানকর কাজের মুল পরিচালিকা!

Sunday, 15 December 2024

বীরত্বের প্রভাতি । 

বীরত্বের প্রভাতি । 

 


বাংলার বুকে জাগ্রত প্রভাতে,বীরের সন্তান, চলছে রণপথে।হৃদয়ে দাউ দাউ আগুন,স্বপ্নে আঁকা মুক্তির দিগন্ত।
পড়ার টেবিল ছেড়েপথে নামলো তাঁরা,প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে,অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে।শান্তির পতাকা হাতে,দাঁড়ায় সম্মুখে,বাংলার মাটিতে,সঞ্চারিত নতুন এক আলো।
তাদের সাহসী কণ্ঠে 
বাজে বিজয়ের সুর,অন্যায় বিরোধী প্রতিবাদ,দুর্বার গর্জন, স্বপ্নে উজ্জ্বলশান্তির আকাশ,প্রতিটি পদক্ষেপে জাগেদৃঢ় সংকল্পের প্রকাশ।

 তরুণদের এই সুরবাংলার হৃদয়ের ভাষা,তাদের বীরত্বে জ্বলে,আগামী দিনের দীপশিখা।তারা গড়বে ইতিহাস,গৌরবময় কাহিনী,বাংলার ভবিষ্যৎ,তাদের স্বপ্নের রহস্য।
বীরত্বের গাথায় জাগুকনতুন প্রভাত,স্বাধীনতা ও ন্যায়েরচূড়ান্ত অঙ্গীকারে।বাংলার আকাশে উড়ুকশান্তির শুভ্র পায়রা,তরুণদের সংগ্রামে, বিজয়ের মহিমাসঞ্চারিত হোক।

এক ভাগ্যবতী মা (কিশোর বালকের যুদ্ধের গল্প)

এক ভাগ্যবতী মা (কিশোর বালকের যুদ্ধের গল্প)

নিঝুম নিস্তব্দ রজনী । আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। ঊর্ধ্বলোকের বাতায়ন খুলে তারকা রাজি মিটমিট করে হাসছে। মেঘমালা ডানা মেলে উড়ে চলে যাচ্ছে দূরে, বহু দূরে, অজানালোকে। স্বর্গীয় সুষমায় সিক্ত পবিত্র মদীনা নগরী তখন ঘুমে সম্পূর্ণ অচেতন । ক্রমে রাত গড়িয়ে সুবহে সাদিক হল ।
 মুয়াজ্জিনের সুমধুর কণ্ঠ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। মুসলিম নর-নারীরা সালাতে ফজর আদায় করল। সকালের সোনালী রবির আলোকচ্ছটায় পূর্বাকাশ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল । রাতের আধার এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। লোকজন নামায শেষে তেলাওয়াত অযীফা নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক এমন সময় আবছা
 অন্ধকারের বুক চিরে একটি সুউচ্চ কন্ঠস্বর ছড়িয়ে পড়ল। মদীনার রাস্তাঘাট, মাঠ-ময়দান, অলিগলিসহ সকল স্থানেই পৌঁছল- হে মুসলিম মুজাহিদরা! হে রাসূলের জানবাজ সাহাবীরা! পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের নাম-নিশানা চিরতরে মুছে ফেলার জন্য সমস্ত কুফুরী শক্তি একত্রিত হয়েছে। বসে থাকার সুযোগ নেই ৷ এক্ষনি জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়। হযরত বেলাল (রা.) এর এ আচানক আহবানে অচেতন মদীনা নগরী শিহরিয়ে উঠল। প্রাণচাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল প্রতিটি ঘরে ঘরে। জিহাদে শরীক হয়ে শহীদ কিংবা গাজী হওয়ার এক দুনির্বার আকাংখা সকলের মাঝেই তীব্র রূপ ধারণ করল । এক বিধবা মহিলা। জীর্ণ কুটিরে স্বীয় পুত্রকে বুকে জড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হযরত বিলাল (রা.)-এর বুলন্দ আওয়াজ কর্ণ কুহরে পৌঁছতেই তার নিদ্র৷ যেন শত সহস্র মাইল দূরে পালিয়ে যায় । জিহাদের আহবানে তার হৃদয়টা ছ্যাৎ করে উঠে। গরম ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু মনের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে।

 হৃদয় কন্দরে ভেসে উঠে প্রিয়তম স্বামীর অন্তিম মুহূর্তের স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাগুলো। মনে পড়ে ঐ সময়ের কথা, যখন তিনি স্বামীর হস্তে তুলে দিচ্ছিলেন চকচকে শানিত তরবারী, আর নিজ হাতে পড়িয়ে দিচ্ছিলেন লৌহবর্ম । তারপর অশ্বের পদাঘাতে ধুলিঝড় উড়িয়ে তিনি চির বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিলেন বদর প্রান্তরে। কিন্তু তারপর……..? তারপর তিনি ফিরে এসেছিলেন শহীদের খুন রাঙ্গা আবরণে । অধরে লেগেছিল জান্নাতী হাসির অপূর্ব ঝলক। প্রতিটি রক্ত কণিকা থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল বেহেশতী খুশবু । শহীদের অমীয় সুধা পান করে তিনি আজ দূরে, বহু দূরে। জান্নাতের মনোরম উদ্যানে । কিন্তু আমি? আমি বুঝি চির বিরহিনী, চির দুঃখিনী। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কল্পনার সাগরে
 সন্তরণের পর তার চক্ষুদ্বয়ে নামল অশ্রুর বান। ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। মনে মনে আফসোস করে বললেন, হায়! যদি আমার পুত্র সন্তানটি বড় হত, তবে আজ তাকে জিহাদে পাঠিয়ে মুজাহিদের মা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতাম। ফোঁপানো কান্নার সকরুণ সুর আর বাধভাঙ্গা অশ্রুর উষ্ণ পরশে এতিম বালকটির ঘুম ভেঙ্গে গেল। মায়ের চেহারা পানে চেয়ে হতবিহবল হয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরল সে। তারপর কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলল, মা! তুমি কাঁদছ? কি হয়েছে তোমার? এতটুকু বলে আবেগের আতিশায্যে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এল। ওষ্ঠধর কাঁপতে লাগল । শত চেষ্টা করেও আর কিছু বলতে পারল না । মাও ছেলেকে বুকে নিয়ে স্নেহের আবেশে কপালে চুমু খেলেন । গভীর মমতায় জড়িয়ে ধরে স্বস্নেহে মাথার চুলগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন- বাবা! আজ ইসলামের বড় দুর্দিন। এই মাত্র জিহাদের আহবান এসেছে মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে ৷ সমস্ত কাফেররা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। তারা চায় ইসলাম ও মুসলমানদের নাম নিশানা পর্যন্ত মুছে ফেলতে। তোমার আব্বু বেঁচে থাকলে তাকে জিহাদে পাঠাতাম। কিন্তু তিনি তো বেঁচে নেই। আর তুমিও অনেক ছোট । এ দুঃখেই আমি কাঁদছি । বালকটি শান্ত অথচ গভীর কন্ঠে বলল, এজন্য কি কাঁদতে হয় মা ! আমি ছোট বলে আমাকে অবজ্ঞা করবেন না। কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করার হিম্মত আমার আছে। অনুগ্রহ করে এখনই আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নিয়ে চলুন। তিনি যদি আমাকে জিহাদের জন্য কবুল করেন তবে তো আমাদের মহা সৌভাগ্য। আর বিলম্ব নয়। চলুন, এখনই আমরা রওয়ানা দেই। তার চোখে মুখে প্রাণোচ্ছলতার ছাপ । 
ছেলের কথায় বিধবা মায়ের শুষ্ক ঠোঁটে খেলে গেল এক টুকরো স্বর্গীয় হাসি। তৃষিত হৃদয় কাননে সঞ্চারিত হল উৎফুল্লতায় ভরা শান্তির জোয়ার। আনন্দের হিল্লোল বয়ে চলল সমস্ত দেহ জুড়ে। স্নেহের আতিশয্যে চুমোয় চুমোয় ভরে দিল তার সমস্ত মুখমন্ডল । বাদ ফজর। মসজিদ চত্বরে অবতারণা হয় এক অপূর্ব দৃশ্যের । চারিদিক থেকে প্রবীন মুজাহিদরা সমবেত হয়েছেন। সাথে সাথে রয়েছেন নবীন মুজাহিদরাও। তাদের মুখে স্নিগ্ধ হাসি। বুকে অসীম সাহস। হৃদয়ে উচ্ছসিত উদ্যম। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ তাদের সেনাপতি। আল্লাহপাক পরিচালক। সুতরাং তাদের বিজয় রুখবে কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন। শুরু হল বাছাই পর্ব। যারা ছোট, বয়সে কিশোর, তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হল। অত্যন্ত আদর সোহাগ করে, বুঝিয়ে সুজিয়ে। বাছাই পর্ব এখনও শেষ হয়নি। বিধবা মহিলা তার সন্তানকে নিয়ে রাসূলের দরবারে উপস্থিত হলেন। আশা-নিরাশার দুলায় দুলছেন তিনি। আলো-আধারের এক অপূর্ব মিলন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার মুখাবয়বে। বললেন আবেগ জড়িত কণ্ঠে ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ ছেলেটি আমার জীবনের একমাত্র সম্বল । আমার আর কোন সন্তান নেই। এর পিতা বদরের যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। আমার হৃদয়ের একমাত্র তামান্না, একে আপনি জিহাদে নিবেন। যেন কেয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর সামনে কেবল মুজাহিদের স্ত্রী হিসেবেই নয়, মুজাহিদের মা হিসেবে দন্ডায়মান হতে পারি। বিধবা মহিলার কথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ মন্ডলে মুচকী হাসির একটা বিদ্যুৎ চমক খেলে গেল। মুগ্ধ হলেন সমবেত মুজাহিদরাও। ভাবলেন, ত্যাগের কি অপূর্ব নযীর। বদর যুদ্ধে স্বামী শহীদ হয়েছেন। এখন আবার কলিজার টুকরা একমাত্র সন্তানকে জিহাদের জন্য নিয়ে এসেছেন। দ্বীনের জন্য এ কুরবানী সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে । পিতার শাহাদাতের কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদর করে ছেলেটিকে কাছে টেনে নিলেন। স্নেহার্দ্র হাত মাথায় বুলিয়ে দিলেন। কপালে চুমো খেয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন– তুমি এখনো ছোট, তাই না? আরেকটু বড় হও। তোমাকে
অবশ্যই জেহাদে নেব, কেমন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শুনে ছেলেটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! রান্না করার সময় আম্মুকে দেখেছি, প্রথমে তিনি ছোট ছোট লাকড়ীগুলো চুলোয় আগে দেন৷ আমি চাই, আমাকেও ছোট লাকড়ীর ন্যায় শত্রু পক্ষের সম্মুখে ঢাল হিসেবে সর্বাগ্রে পেশ করবেন । ছেলেটির বুদ্ধিদীপ্ত কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্মিত হলেন। অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি মেলে ক্ষণকাল তাকিয়ে রইলেন তার নিষ্পাপ মুখের দিকে।

 একরাশ প্রশান্তিতে ভরে উঠল তার হৃদয়-মন । বললেন বিধবা মহিলাকে লক্ষ্য করে- যাও হে ভাগ্যবর্তী! আল্লাহ তোমার ছেলেকে কবুল করেছেন। তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি কিয়ামত দিবসে মুজাহিদদের মায়ের কাতারেই থাকবে।আজকের মায়েরা নিজ নিজ কলিজার টুকরা সন্তানকে দ্বীনের জন্য কুরবানী দিতে প্রস্তুত থাকুক- এই হোক এই ঘটনার মূল শিক্ষা।

Saturday, 7 December 2024

মাতৃভূমি

মাতৃভূমি

 


লিখাটা লিখছিলাম ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রয়ারিতে। কিন্তু কোন জায়গায় প্রকাশ করার মত সাহস পাই নাই। হঠাৎ আজকে মনে হল লেখাটা পকাশ করি খারাপ ভাল তো লেখাতে থাকবেই।

‘ভালবাসা‌!’  হ্যা ভালবাসা, আর সবচেয়ে তীব্র ভালবাসাটি হওয়া উচিৎ মাতৃভূমির জন্য। যে মাতৃভূমি আমাদের বাঁচতে শেখায়, চলতে শেখায় তার জন্যই। যে মাতৃভূমি আমাদের পথ দেখায় তার জন্য। আর আমাদের মাতৃভূমির প্রতি কতটুকু ভালবাসা আছে আমরা কি তা জানি? আমরা অনেকে বিশ্বাস করি, যে তোমাকে যতটুকু ভালবাসে তাকে তুমি ততটুকু অথবা তার চেয়ে বেশি ভলবাসা দাও।

 

মাতৃভূমি আমাদের গভীরভাবে ভালবাসে। আর এই গভীরতা মাপা মনে হয় করো পক্ষেই সম্ভব না। কিন্তু আমরা তাকে কতটুকু ভালবাসি? এর উত্তর কি হতে পারে? আমরা কি ক্ষমতা, টাকাকেই বেশি ভালবাসি না? হ্যা আমরা ক্ষমতাকেই বেশি ভালবাসি। আমি বিশ্বাস করি ক্ষমতা দিয়ে মাতৃভূমির উন্নয়ন করা সম্ভব। কিন্তু আমরা তা কতটুকু করছি? আমার প্রশ্ন ক্ষমতাবানেদর কাছে, আপনারা কি অর্থ আয়ের(টাকা মারার) জন্য উন্নয়ন করছেন?  নাকি তা মন থেকে শুধু মাতৃভূমির জন্য করছেন? যদি তা মাতৃভূমির জন্যই করেন তবে কেন দেশের মানুষ কষ্ট পায় আপনাদের কথায় আর কর্মসূচিতে? আপনারা কেন ঐ সংসদে দেশের স্বার্থে কথা না বলে বিরোধি দলের বদনামে ব্যাস্ত থাকেন? যদি সত্যি আপনারা মাতৃভূমির কথাই ভাবেন তবে কেন একত্রে দেশের উন্নয়নের কথা বলেন না, কেন করেন না? আপনারা একে অন্যকে শুধু দোষারপই করবেন তবে কখন কথা বলবেন দেশ কে নিয়ে, আর কখন দেশের জন্য কাজ করবেন?

 

তখন খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি একজন সম্পাদক তার লেখাতে কোন একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে কথা বলেছন। কিন্তু সাহেব আপনার মনে রাখা উচিৎ আপনি এখন আর কোন দলের না। আপনি আপনার মাতৃভূমির সন্তান। আপনার মায়ের জন্য ভাল কিছূ করুন। এর জন্য আপনার নিরপেক্ষ লেখাই কি যথেষ্ট কেআন টানা টানি না? শুধু সম্পাদক না,  ‘লেখক, ব্লগার, মিডিয়া প্রায় অনেককেই একটি দলীয় প্রভাব যুক্ত দেখা যায়। কিন্তু আমরা জনগণ চাই একজন লেখক যিনি হবেন দলীয় প্রভাব মুক্ত নিরপেক্ষ। জ্বী জনাব আপনাকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে কোন দলের জন্য না।

কত দিন দেখিনা তোমায়

কত দিন দেখিনা তোমায়


 

কত দিন দেখিনা তোমায় ।
ভেবেছি এই বুঝি এলে ,
সকালের ঝলমলে রোদ হয়ে ।
জানালা খুলে দেখেছি ,
খা খা রোদ , শুধু রোদ্দুর
কোথাও নেই তুমি ।

কত দিন দেখিনা তোমায় ।
দখিনা বাতাসে সবুজে সবুজে নাচন , পাশে কোকিলের সুর ।
ভেবেছি এই বুঝি এলে ।
তাকিয়ে দেখেছি চারিদিক , শুধু শুন্যতা ।
কোথাও নেই তুমি ।

কত দিন দেখিনা তোমায় ।
আকাশে মেঘের আনাগোনা ,গুড়ুম গুড়ুম শব্দ ।
বাদল আসবে বলে ।
তাকিয়ে দেখেছি বাহিরে , বিষ্টি থেমে গেছে।
কোথাও নেই তুমি ।