Sonar Bangla blog: মুক্ত মঞ্চ

সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu
Showing posts with label মুক্ত মঞ্চ. Show all posts
Showing posts with label মুক্ত মঞ্চ. Show all posts

Wednesday, 18 December 2024

Year-Ender 2024: ভিনিসিয়াস জুনিয়র জিতে নিলেন সেরার শিরোপা, ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা

Year-Ender 2024: ভিনিসিয়াস জুনিয়র জিতে নিলেন সেরার শিরোপা, ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা

 


BEST FIFA Awards 2024: ব্যালন ডি'অর জেতা হয়নি। কিন্তু ব্রাজিল তথা রিয়াল মাদ্রিদের ফরওয়ার্ড জিতে নিলেন ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার।


ফিফা গতকালই ঘোষণা করেছে বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডসের পুরস্কার-জয়ীদের তালিকা। পুরুষ বিভাগে ভিনিসিয়াস জুনিয়র বর্ষসেরা, মহিলা বিভাগে সেরার শিরোপা পেলেন স্পেন তথা বার্সেলোনার মিডফিল্ডার আইতানা বনমাতি।



রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ভিনিসিয়াস জুনিয়র ২০২৩-২৪ মরশুমে ৩৯টি ম্যাচে ২৪টি গোল করেছিলেন। গত জুনে রিয়াল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব জেতে। ফাইনালে মাদ্রিদের দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। কনমেবল কোপা আমেরিকায় কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি যাওয়া ব্রাজিল দলেও ছিলেন তিনি।

সাও গনসালোয় দারিদ্র্য এতটাই বেশি যে সেখানে নানাবিধ অপরাধ লেগেই থাকে। তেমন শহরে খালি পায়ে রাস্তায় ফুটবল খেলা শুরু করার পর ফিফার বর্ষসেরা হওয়াটা তাঁর কাছে যে কার্যত কল্পনাতীত, পুরস্কার জিতে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। লা লিগা, সুপারকোপা দে এসপানা, উয়েফা সুপার কাপ জয়েরও স্বাদ পেয়েছেন তিনি।
ভিনিসিয়াস জুনিয়র বলেন, এই পুরস্কার পাওয়া আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে যে শিশুরা কোনও কিছুকে অসম্ভব বলে মনে করে, শীর্ষে পৌঁছনো নিয়ে সন্দিহান থাকবে তাদের ভুল ভাঙবে। ভিনিসিয়াস জুনিয়রের সঙ্গে বর্ষসেরার দৌড়ে ছিলেন জুড বেলিংহ্যাম, রদ্রি, লামিনে ইয়ামালরা। রদ্রি জিতেছিলেন ব্যালন ডি'অর।


২০২৩ সালে স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা আইতানা বনমাতি হলেন মহিলাদের বিভাগে বর্ষসেরা ফুটবলার। বার্সেলোনার মিডফিল্ডার টানা দ্বিতীয়বার এই পুরস্কার দখলে নিলেন। একাধিক খেতাব জয়ের লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে যাওয়াই তাঁকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে বলে জানান বনমাতি। ফের পুরস্কার জেতায় স্বাভাবিকভাবেই তৃপ্ত।


বেস্ট ফিফা ফুটবল পুরস্কার কারা পাবেন তা ঠিক করতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলে। সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের পাশাপাশি সাংবাদিক ও বিভিন্ন দেশের কোচেরাও নিজেদের মতামত জানানোর সুযোগ পান। ফিফার বিচারে বর্ষসেরা মহিলা গোলকিপার আলিসা নেহের, পুরুষদের বিভাগে সেরা গোলকিপারের পুরস্কার পেলেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
বর্ষসেরা মহিলা কোচ এমা হেইস এবং পুরুষদের বিভাগে সেরা কোচ কার্লো আনসেলোত্তি। মার্তা পুরস্কার পেল মার্তা। পুসকাস পুরস্কার জিতে নিলেন আলেহান্দ্রো গার্নাচো। ফিফা ফ্যান অ্যাওয়ার্ড পেলেন ভাস্কো দা গামার নাগরিক ব্রাজিলের ফুটবল-ভক্ত গিলেরমে গান্দ্রা মৌরা। ফিফা ফেয়ার প্লে পুরস্কার জিতেছেন তিয়াগো মারিয়া।
ফিফা বর্ষসেরা একাদশ (পুরুষ)- এমিলিনিয়ানো মার্তিনেজ, রুবেন দিয়াস, দানি কারভাহাল, অ্যান্টনিও রুডিগার, উইলিয়াম সালিবা, জুড বেলিংহ্যাম, রদ্রি, টনি ক্রুজ, আর্লিং হালান্ড, লামিনে ইয়ামাল, ভিনিসিয়াস জুনিয়র।

ফিফা বর্ষসেরা একাদশ (মহিলা)- আলিসা নেহের, ইরেন পারাদেস, ওনা বাটল, লুসি ব্রোঞ্জ, নাওমি গিরমা, এইতানা বনমাতি, লিন্ডসে হোরান, গাবি পরতিলহো, প্যাট্রি গুইজারো, ক্যারোলিন গ্রাহাম হানসেন, সালমা পারালুয়েলো।

Monday, 16 December 2024

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম

 


কালোজিরা কি ও কালোজিরা কি কি উপকারে লাগে তা আমরা আজকের আর্টিকেল থেকে অসুখ বিসুখে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়মগুলি জেনে নিব। আপনার স্বাস্থ্য সমস্যায় কালোজিরার ওষুধি গুনাগুন গুলি কাজে লাগিয়ে সেফা লাভ করতে পারেন। প্রিয় পাঠক পাঠিকা, তাহলে চলুন আমরা কালোজিরার ওষুধি গুণাগুন গুলো জেনে নিই…


কালোজিরার উপকারিতা ও ঔষুধি গুণাগুণ
জিরা দুই রকম, যেমন-জিরা এবং কালোজিরা।
এদেরকে আমাদের রান্না ঘরে দেখা গেলেও ঔষধ হিসেবেও এরা কম যায় না। শুনেছি কালোজিরা নাকি আমাদের দেশে হতো না। তবে কবে, কখন যে আমাদের দেশে এ গুলো জন্মাতে শুরু করেছে, তাও নাকি সঠিক জানা যায়নি।
কালোজিরার গাছ দেখতে ছোট। লম্বায় এক হাত বা তার চেয়ে একটু বড় হতে পারে। কার্তিক-অগ্রাহায়ণ মাসে কালোজিরা গাছে ফুল আসে। তারপরে ফল হয় এবং সেটি পাকে পৌষ-মাঘের দিকে।
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম


কালোজিরা ক্ষুধা বাড়ায়। পেটের বায়ু দূর করে আর প্রস্রাব বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া পেট ও ফুসফুসের রোগে ভালো কাজ করে। অর্শ রোগেও এটি ব্যবহার করা হয়। তবে এই কালোজিরা গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধ বাড়াতেও সাহায্য করে বলে জানা গেছে। তা’হলে জানা যেতে পারে আর কী কী রোগে কালোজিরা উপকারে লাগে…
বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম 


০১ অনিয়মিত মাসিকঃ অনেক মেয়েরই মাসিকের সমস্যা হয়ে থাকে। কখনো আগে, কখনো বা পরে হয়। কেউ আবার মাসিকে অল্প রক্ত বা বেশি রক্ত যাবার কারণে কষ্ট পান। এই ক্ষেত্রে কালোজিরার চিকিৎসা ভালো ফল দিতে পারে। মাসিক হওয়ার ৫/৭ দিন আগে থেকে কালোজিরা তৈরি ঔষধ খেতে হবে। প্রথমে ৫০০ মিলিগ্রাম কালোজিরা নিয়ে হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে সকালে আর বিকালে দু’বার খেতে হবে। আশা করা যায়, এতে মাসিকের সমস্যা কমে যাবে। যদি এতে কাজ না হয়, তবে দুই-তিন মাস এই ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে।
০২. বুকে দুধ বাড়াতেঃ মায়ের বুকে দুধ কম থাকলে কালোজিরা খেলে দুধ আসে। প্রথমে ৫০০ মিলিগ্রাম কালোজিরা একটু ভেজে নিয়ে গুঁড়া করতে হবে। এই কালোজিরা গুঁড়া ৭/৮ চা-চামচ দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে দু’বার খেলে উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়া প্রসব পরবর্তীকালে কালোজিরা ভর্তা খেলে জরায়ু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
৩. চুলকানিঃ শরীরে চুলকানি হলে কালোজিরা ভাজা তেল গায়ে মাখলে চুলকানির উপশম হয়। ১০০ গ্রাম সরিষার তেলে ২৫/৩০ গ্রাম কালোজিরা ভেজে সেই তেল ছেঁকে নিয়ে গায়ে ব্যবহার করলে চুলকানি সেরে যায়।


৪. বিছার হুলের জ্বালা-পোড়াঃ বিছা গায়ে হুল ফোটালে খুব জ্বালা পোড়া হয়। এই জ্বালা-পোড়া থেকে মুক্তি পেতে কালোজিরা বেটে হুল ফোটানো জায়গায় লাগিয়ে দিতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি জ্বালা-পোড়া কমে যাবে।
৫. সর্দির কারণে মাথার যন্ত্রণাঃ কাঁচা শ্লেম্মায় খুব মাথা ব্যথা হয়। সেক্ষেত্রে কালোজিরা এক টুকরো কাপড়ের পুটুলিতে নিয়ে নাক-দিয়ে শুঁকতে হবে। মাঝে মাঝে পুটুলিকে একটু নেড়ে চেড়ে দিতে হবে। কালোজিরার গন্ধে মাথার যন্ত্রণা কমে যাবে।
স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় আরও ঘরোয়া টিপস ও লতাপাতার উপকারিতা
০১. লবঙ্গের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
০২. অসুখ বিসুখে দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আমরা আশা করি কালোজিরার উপকারিতা ও ওষুধি গুণাগুণ জেনে আপনার ভালো লেগেছে। এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

মেয়েদের নেফাস সম্পর্কে গোপনীয় মাসআলা।

মেয়েদের নেফাস সম্পর্কে গোপনীয় মাসআলা।

 


মেয়েদের নেফাস যা বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে শুরু হয়। আর তাই বিবাহিত নারীদের নেফাস সম্পর্কিত অতি গোপনীয় মাসআলাগুলি জানা বুঝা ও শিখা খুবই জরুরী। কিন্তু ইসলামি জীবন যাপনে অভ্যস্ত নন এমন নারীরা জানার সুযোগ না থাকার কারণে কিংবা লজ্জা ভয়ের কারণে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাগুলি জানতে ও বুঝতে পারে না। 

 তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। 
নেফাস সম্পর্কে গোপনীয় মাসআলা

মাসআলা : ৭৫. বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পর যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাকে শরীয়তের পরিভাষায় নেফাস বলে।
মাসআলা : ৭৬. নেফাসের সর্বোচ্চ সীমা ৪০ দিন; তদপেক্ষা বেশি দিন রক্ত আসলে তা নেফাস নয় বরং তা ইস্তিহাযা।
মাসআলা : ৭৭. নেফাসের সর্বনিম্ন সময়ের কোন সীমা নেই। একদিন বা সামান্য সময়ের জন্যও উহা আসতে পারে। বরং যদি সন্তান জন্মের পর এক ফোঁটা রক্তও না আসে তাও সম্ভব।


মাসআলা : ৭৮. সন্তান প্রসবের পর সর্বাবস্থায় গোসল করা ওয়াজিব। রক্ত আসলে রক্ত বন্ধ হওয়ার পর আর রক্ত না আসলে নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পর।
মাসআলা : ৭৯. এ সময় যদি গোসল করায় কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে অথবা গোসল করার সাহসই না হয় তবে গোসলের নিয়তে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে। পরে হিম্মত আসার পর বা অসুস্থতার আশংকা কেটে গেলে গোসল করবে।


মাসআলা : ৮০. জমজ দুই শিশু প্রসব হলে প্রথম বাচ্চা থেকেই নেফাস গণনা করা হবে।
মাসআলা : ৮১. অস্ত্রপচার(সিজার) করে বাচ্চা বের করা হলে যদি লজ্জাস্থান থেকেই রক্ত আসে তবে তাকে নেফাসই মনেকরা হবে। অন্যথায় উহা নেফাস নয়।
মাসআলা : ৮২. নেফাসের রক্ত বন্ধ হয়ে হায়েয শুরু হওয়ার মাঝে কমপক্ষে শরয়ী নিয়ামানুযায়ী ১৫ দিন পবিত্র থাকা জরুরী। যদি ১৫ দিনের পূর্বেই হায়েয আসে তবে তা হায়েয নয় নয় বরং ইস্তিহাযা।
নেফাস অবস্থায় নামাজ
মাসআলা : ৮৩. নেফাসের সময় নামায মাফ হয়ে যায়। উহা আর আদায় বা কাযা কিছুই করা লাগে না।
মাসআলা : ৮৪. যখনই সময় ফরয হবে তখনই গোসল করে নামায শুরু করে দিবে। সময় থাকলে তা আদায় নামায হিসেবে গণ্য হবে নচেৎ কাযা হবে।
মাসআলা : ৮৫. নামাযের ওয়াক্ত সামান্য সময় বাকী থাকলে সুন্নত ছেড়ে দিয়ে ফরয পড়ে নিবে।


মাসআলা : ৮৬. ফরয এবং ওয়াজিব (যেমন বেতর) নামাযেরই কেবল কাযা আছে; সুন্নতের কাযা নেই। অবশ্য কারো ফজরের নামায কাযা হয়ে গেলে এবং সে (সূর্য) ডুবার পূর্বে উহার কাযা করলে ফজরের সুন্নতও পড়বে।
নেফাস অবস্থায় রোযা
মাসআলা : ৮৭. নেফাস অবস্থায় রোযা রাখবে না। তবে পবিত্র হওয়ার পর কাযা করা জরুরী।


মাসআলা : ৮৮. রোযা অবস্থায় নেফাস আসলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং পরে উহার কাযা আদায় আবশ্যক হবে।
মাসআলা : ৮৯. গোসল করতে পারে এতটুকু সময় থাকা জরুরী তবে গোসল করা জরুরী নয়। কারণ সুবহে সাদেকের পরে গোসল করলেও কোন ক্ষতি নেই।
মাসআলা : ৯০. গর্ভবতী রোযাদার মহিলার যদি রোযার কারণে বাচ্চার জীবনাশংকা হয় তবে রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয।
মাসআলা : ৯১. গর্ভবতী অথবা দুগ্ধপানকারিনী মহিলারা নিজের বা স্বীয় বাচ্চার জীবনশংকা থাকলে রোযা রাখবে না। পরবর্তী সময় কাযা করবে।
নেফাস শেষ হবার পর গোসলের নিয়ম
মাসআলা : ৯২. নেফাসের গোসলের ঐ একই পদ্ধতি যা পূর্বে হায়েযের গোসলে বর্ণিত হয়েছে।

মাসআলা : ৯৩. জানা গেছে যে, অনেক জায়গায় মহিলাগণ নেফাসের ৪০ দিনের অনেক পূর্বে রক্ত বন্ধ হয়ে গেলেও নেফাসের দিনগুলোর পূর্ণ ৪০ দিন পর্যন্ত নেফাসের অবস্থায়ই কাটায় এবং নিজের এবং নিজেকে নাপাক মনে করে। এটা একেবারেই অনুচিত। এভাবে থাকা নাজায়েয এবং হারাম। বরং যখনই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় আর রক্ত আসার সম্ভাবনা না থাকবে তখনই গোসল করে নামায শুরু করবে।


উৎস : নারীর শ্রেষ্ঠ উপহার বই থেকে সংগ্রহিত। 
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা করি মেয়েদের নেফাস সম্পর্কিত মাসআলা গুলি জেনে আপনাদের ভালো লেগেছে এবং এটি ইসলামিক জীবন যাপনে মুসলিম নারীদেরকে সাহায্য করবে। এটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

আদর্শ নারী – একজন আদর্শ নারী হওয়ার উপায়

আদর্শ নারী – একজন আদর্শ নারী হওয়ার উপায়

 


উত্তপ্ত মরুভুমিতে যেমন পথিক তৃষ্ণা মেটাতে পানি খুজতে বার বার ব্যর্থ হয়, ঠিক তেমনি নারীর উন্নয়নের জোয়ারে বিশ্ব ভাসলেও আদর্শ নারীর দেখা পাওয়া বড় দায়! সমাজ আজ আপেক্ষিকভাবে বৈষম্য দুর করতে গিয়ে পুরুষের চেয়ে নারীর তিনগুন সম্মানকে কমিয়ে এনেছে সমানতার কাঠগোড়ায়! ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে একজন নারীর সম্ভ্রান্ত পরিচয়, প্রকৃত মুমিনা হওয়ার স্পৃহা, একটি আদর্শ প্রজন্ম উপহার পাওয়ার ভবিষ্যৎ ও!


আজ মুল্যবান মুমিনা হয়ে পড়েছে পথের ধারে হিংস্র মানুষদের লোভ লালসা পুরনের চাহিদা বস্তু! আজ তাদের আদর্শ সো কল্ড পশ্চিমা বিশ্বের সংস্কৃতি! ফলে সমাজে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে মেয়েদের উচ্ছৃঙ্খল চলাফেলা, পারিবারিক অশান্তি, পরকীয়া, ধর্ষন এমনকি ডিভোর্স সহ নানান রকম ফেতনা!
তাই, একজন মুসলিমাহ্ হিসেবে আমাদের নারীদের আদর্শ হওয়া চাই নবী রাসুলের যুগের বিবি ও মহিলা সাহাবীরা! ফেতনার যুগে একজন আদর্শ নারী হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি! একজন মুল্যবান মুসলিমাহ্ হয়ে দুনিয়া ও আখিরাত সুন্দর করতে আদর্শ নারী হয়ে উঠার দৃঢ় সংকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে ইসলাম জীবনব্যবস্থাইএকমাত্র সফলতার মুল মন্ত্র।
ইসলামে আদর্শ নারী কারা


যুগে যুগে মানুষকে সঠিকপথে পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়াতে নবী রাসুল প্রেরন করেছেন৷ তাঁরা ছিলেন ভ্রান্ত মানুষদের সঠিকপথে পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা পাঠানো পথপ্রদর্শক। একজন মানুষ হিসেবে আমাদের আদর্শ শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)! তবে, প্রশ্ন হচ্ছে একজন মুসলিমাহ্ হিসেবে আমাদের কোন নারীদের আদর্শ হিসেবে মানতে হবে? আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এমন বেশ কয়েকজন আদর্শ মুসলিম নারীদের কথা বলেছেন! এছাড়া, নবী-রাসুলদের জীবনী ও ইসলামি ইতিহাস থেকে আমরা আদর্শ নারী হিসেবে বহু সাহাবীদের দৃষ্টান্ত অনুধাবন করতে পারি! নিম্নে উল্লেখযোগ্য ৫ সাহাবীদের উত্তম আখলাক ও গুনাবলি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
হযরত খাদিজা (রা)


একজন মুসলিম নারীর আদর্শ হতে পারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর প্রথম ও প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা), যিনি আমাদের প্রিয়নবীর কঠিন সময়ের সঙ্গী ছিলেন! নারী হিসেবে প্রথম ইসলাম কবুলকারী ছিলেন হযরত খাদিজা(রা)! নব্যুয়ত ও তার পরবর্তী সময়ে মক্কার কাফেররা মহানবী (সা) এর বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র, মিথ্যা অপবাদ ও নির্যাতন চালাতো। অথচ, স্ত্রী খাদিজা (রা) এর উত্তম আখলাক ও ভালোবাসা সেসময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ব্যাথিত হৃদয়ে আবারও দৃঢ় বিশ্বাস যোগাতো৷ যেসময় গোটা দুনিয়া নবীজির বিরুদ্ধে ছিলেন, সেসময়ে হযরত খাদিজা তার পাশে ছায়া হিসেবে ছিলেন।


৪০ বছর বয়সের একজন বিধবা নারীর জন্য ২৫ বছরের একজন যুবকের হৃদয়ে এতই ভালবাসা সৃষ্টি করেছিলেন যার কারনে প্রিয়নবী তার মৃত্যুশোকে সবথেকে বেশি ব্যথিত হয়েছিলেন৷ তিনিই একমাত্র স্ত্রী যার জীবদ্দশায় মহানবী (সা) আর কোন বিবাহ করেননি। ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে হযরত খাদিজা (রা) এর স্বামী ভক্তি, বিপদে স্বামীর ঢাল, আর্থিক সহায়তা, হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ধৈর্যধারন, ইসলাম প্রচারনায় সাহস ও অনুপ্রেরনা দেওয়া সকল কিছুই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
হযরত আয়েশা (রা)


হযরত আয়েশা বিনতে আবু বকর সিদ্দিক কে বলা হয় উম্মুল মুমিনীন অর্থাৎ বিশ্বাসীদের মাতা! আয়েশা (রা) এর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, বিচক্ষন, বুদ্ধিমতী ও দ্বীনি ইলমে পান্ডিত্যের অধিকারী৷ তিনি রাসুল (সা) এর প্রিয়তমা স্ত্রী যিনি মহিলা সাহাবীদের মধ্যে সর্বোচ্চ হাদিস বর্নাকারী (সর্বমোট ২২১০টি)।এছাড়া তিনি তাফসির, হাদীস, ফিকহ ও আরবী সাহিত্যে অসাধারন ইলমের অধিকারী ছিলেন।মুনাফিকদের কুৎসা রচনায় আয়েশা (রা) চরিত্র ও পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কুরআন মাজীদে সুরা নুর এ আল্লাহ্ তা’আলা স্বয়ং তাঁর উত্তম ও আখলাক ও পবিত্রতা সম্পর্কে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন! সুবহানাল্লাহ!আয়েশা (রা) এর দানশীলতার ব্যাপারে ও নজির আছে। একজন কিশোরী স্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সংসার সামলানো, স্বামীর আনুগত্য, হাদিস শাস্ত্রে অবদান নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়।
হযরত ফাতেমা (রা)


হযরত ফাতেমা (রা) ছিলেন আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর পৃরিয় কন্যাসন্তান! যিনি হবে নারীদের জান্নাতের সর্দার! হযরত ফাতেমা (রা) এর জীবনীর যে বিষয়টি বড় শিক্ষামুলক তা হলো ‘ অল্পে তুষ্ট’ এবং “সাদামাটা জীবন”। হযরত ফাতেমা (রা) গৃহস্থালির সকল কাজ নিজে করতেন। তার সংসার জীবনে প্রচুর সংগ্রাম ও আর্থিক দুরাবস্থা থাকলেও দাম্পত্য জীবনে আলি রা) ও ফাতেমা রা এর অগাধ ভালোবাসা, সম্মান ও বিশ্বাসের নজীর চোখে পড়ে।
আরবের সম্ভ্রান্ত বংশ ও শ্রেষ্ঠ মানবের কন্যা হয়েও তিনি প্রাচুর্যের জীবনে গা ভাসান নি! বিশ্বনবী (সা) এর এই আদর্শ কন্যা আল্লাহর ইবাদতে সর্বদাই মশগুল থাকতেন। পর্দার ব্যাপারে তিনি ছিলেন বরাবরই কঠোর স্বভাবের! মৃত্যুর আগে তার পরিয়াদ ছিল, তাঁকে যেন রাতে দাফন করা হয় যাতে তার শরীরের অবয়ব কেউ বুঝতে না পারে- এই ছিল ফাতেমা (রা) এর পর্দা!


ফাতেমা রা ছিলেন খুবই দানশীল! তিনদিন ধরে অভাব অনটনের সময় এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক আসলে তিনি তাঁর গলার হার বৃদ্ধাকে বিক্রির জন্য দিয়ে দেয়! হযরত ফাতেমা রা পিতার আদুরের দুলালি তো ছিলেন সাথে পিতার আদেশ ও নিষেধ সবসময় মেনে চলতেন৷
হযরত আছিয়া (রা)
আছিয়া রা ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে বড় জালেম ফেরাউনের স্ত্রী! একজন পথভ্রষ্ট, জালেম ও কঠোর শাসকের পত্নী হওয়া স্বত্ত্বেও আছিয়া (রা) ছিলেন আল্লাহ্ ভীরু একজন নেককার মুমিনা। বিশাল প্রাসাদ, সম্রাজ্রের মাঝে থেকেও আছিয়া রা সর্বদাই ছটফট করতেন৷ তিনি লোভ লালসা , প্রাচুয্যের মাঝেও এক আল্লাহ্ তা’আলা এর একত্ববাদে সদা অটল ছিলেন। ফেরাউনের অত্যাচার,জুলুম, নির্যাতনে তিনি ধৈযহারা হয়ে পড়েননি। বরং সবদা আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন এভাবে-


হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ১১)
জান্নাতবাসীদের মধ্যে সুসংবাদপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ নারীদের মধ্যে আছিয়া রা অন্যতম! তার সততা, আল্লাহ্ ভীরু, ইমানের প্রজ্জলিত শিখা প্রতিটি মুমিনা নারীর জন্যই আদর্শ!
হযরত মরিয়ম (আ)


হযরত মরিয়ম (আ) ছিলেন ইসা (আ) এর মাতা, যার জীবনী থেকে আল্লাহর ফায়সালার উপর তাওয়াক্কুল, বিপদাপদে ধৈর্যধারন ও ইবাদতে মশগুল থাকার মত আদর্শ গুনাবলিগুলো প্রতীয়মান হয়। ইনি সেই মহান স্বত্তার জননী ও নারীদের আদর্শ যাঁর নামে মরিয়ম নামে আল্লাহ্ তা’আলা একটি সুরা নাযিল করেন।
মারিয়াম (আ) ছিলেন পুত পবিত্র, শালীন নারী এবং তিনি ঘরের এককোনে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তিনি পর্দা রক্ষা করতেন৷ এসকলকিছু আল্লাহ্র এতই পছন্দ হন যে তাঁর জন্য ইসা (আা) এর মত নবীকে মনোনিত করলেন!


আল্লাহর কুদরতে মরিয়ম (আ) কোনরকম স্বামী সঙ্গ ছাড়া শিশু ইসা (আ) কে জন্ম দেন৷ এই সময় তিনি ভয় ও সংশয়ে নিজের পবিত্রতা নিয়ে বারংবার আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। তার সংযম এত বেশি ছিল যে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষদের অপবাদ, তিরস্কার সহ্য করতে থাকেন। অত:পর আল্লাহ স্বয়ং তার পবিত্রতা নিয়ে স্বাক্ষ্য দেন-“আর সেই নারী যে তার পবিত্রতা রক্ষা করেছিল, আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে প্রাণ ফুঁকে দিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য নিদর্শন বানালাম।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯১)
নারীবাদী বা ফেমিনিষ্টদের নারী উন্নয়নের ফাঁদ:


ইতোপূর্বে আমরা প্রসিদ্ধ নারী সাহাবীদের জীবনী পরলেও বাস্তবে আমরা ভাবতে পারি তা এখন কি আর সে যুগ আছে? তখন নবী রাসুলের যুগে মানায়! এখন আধুনিক যুগ! এই যুগে নারীবাদীরা “নারী” শব্দটিকেই পুরুষ শব্দে বারবার বিভাজন করছে। একজন নারীকে এখন নারীবাদীরা শিখাচ্ছে কিভাবে পুরুষদের মত পোশাক পড়া যায়, কিভাবে তাদের সাথে কর্মস্থলে সমান তালে কাজ করা যায়! কিভাবে নারীরা নিজেদেরকে প্রদর্শনী রুপে সোশ্যাল মিডিয়া সহ রাস্তা ঘাটে প্রমোট করবে! এগুলোই নাকি নারী উন্নয়ন!
সংস্কৃতি ও বাঙালিত্বের দোহাই দিয়ে আজ সমাজে নারীদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ানো হচ্ছে। ইসলামে বিধি নিষেধের ধারে কিনারে তো তারা নেই ই, বোনদের আজ নারীবাদীরা নিজেদের কুলষিত পথে জড়িয়ে নিচ্ছে। এখন মা বোনেরা আর সংসার নিয়ে ভাবেনা! এখন মা বোনেরা সংসার সামলিয়ে জব ও করেনা! তারা হয়ে গেছে স্বাধীন কর্মজীবি! তারা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে! তারা স্বাধীনভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো জাহিলিয়াতি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় আগে যেমন শালীন মেয়ে দেখলে বোঝা যেত এই মেয়ে সম্ভ্রানৃত ঘরের ই মেয়ে। কিন্তু আজ রাস্তায় পশ্চিমা বিশ্বের হুবুহ চলাফেলরা হরহামেশাই দেখতে পাবেন।


আজকাল পন্যের নামিদামি বিজ্ঞাপন হোক অথবা হোক কোন গাড়ির শোরুমের ব্যানার! পুরুষ আর মডেল হয়না! মডেল হয় নারী! কারন নারীরাই পারে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে। দিনের পর দিন এভাবে নারীদেরকে নারী উন্নয়নের মিথ্যা ফাঁদে ফেলা হচ্ছে এবং তাদের সম্ভ্রম, শালীনতা, সৌন্দর্যের বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে।


বর্তমান ফেতনায় আদর্শ নারী হওয়ার উপায়:
আজকের সমাজে দ্বীনি পরিবেশ পাওয়া বড় দায়! ফেতনার এই যুগে নারীদের আদর্শ যখন হয়েছে পশ্চিমা সভ্যতার সংকৃতি তখন ছোট কন্যাসন্তান থেকে একজন বৃদ্ধা নারী ও অনিরাপদ সমাজে বাস করছে। সমাজের কাছে পর্দার আড়ালে থাকা একজন দ্বীনি বোন আগেকার বর্বরতার যুগের পুরুষশাসিত নারী! স্কুল কলেজ, ভার্সিটিতে হিজাব পরিহিতা নারীদের পড়তে হয় নানা রকম অসহায় অবস্থায়! এই সকল পরিস্থিতি দ্বীন ও ইলম চচা হতে পারে একমাত্র সমাধান! নিম্নোলিখিত কিছু উপায় মেনে চললে ফেতনাময় সমাজে দ্বীন ও আদর্শ দরে রাখা সম্ভব-


ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা
দুনিয়াবি ও আখিরাতে সাফল্য অর্জনের চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য হওয়া! ফরজ বিধানসমুহের পালনে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথ আদায় করবে; রমজানের রোজা ঠিকভাবে রাখবে; (নিজেদের) সতীত্ব রক্ষা করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে; সে নারীকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ কর।’ (মুসনাদে আহমদ)।
সঠিক পর্দা পালন


শুধু হিজাব পেঁচিয়ে আধুনিক পর্দা কখনো আল্লাহর দেয়া নির্দেশ পালনের সাথী হতে পারে না! পরিপূর্ণ পর্দা করার পাশাপাশি ফ্রি মিক্সিং ও নন মাহরামের সাথে গল্পগুজব ও এখনকার কালচার। এই কালচারে আপনি নিজের রবের সন্তুষ্টি হারাবেন এবং ইসলাম সম্পর্কে একধরনের ফেতনা সৃষ্টি করবেন! তাই, সঠিক পর্দা পালনে তৎপর হতে হবে।
উত্তম আখলাক আয়ত্বকরন
উত্তম আখলাক সবদাই একজন মুমিনার আমলনামা ভারী করবে। পরিবার, প্রতিবেশী ও সকল স্তরে উত্তম আখলাকের কারনে একজন মুসলিমাহ্ সম্মানিত হতে পারে। এচাড়া আখিরাতে ও আছে এর উত্তম প্রতিদান-কেয়ামতের দিন মিযানের পাল্লায় সচ্চরিত্র সবচে বেশি ওজনী ও ভারী হবে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২০০২
দ্বীনি বান্ধবী বাছাইকরন


কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ! তাই প্রত্যেক যুবতী বা নারীর উচিত বেদ্বীন মানুষদের সঙ্গ ত্যাগ করে, আল্লাহভীরু বান্ধবীদের সাথে বন্ধুত্ব করা। যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরন হবে, তারাই দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত বন্ধু! এর ফলে পাপকাজ তেকে যেমন রেহাই পাওয়া যায় তেমনি আখিরাতের কথাও বেশি বেশি স্মরন হয়। ফলে ইমান দৃঢ় হবে
আত্ন সংযম ও ধৈযধারন
যুগপোযোগী কালচারকে না বলে নারী যখন ইসলাম অনুশাসনে চলবে বাধা বিপত্তি আসবেই! কটুক্তি, হিংসা, নিন্দা, অপবাদ দিয়ে আশেপাশের মানুষ কষ্ট দিবে। তাই, আল্লাহর পরীক্ষা ভেবে সকলকিছুতে ধৈর্যধারনক্ষমতা রাখতে পারলে নারীদের জন্য ব্যাক্তিগত, পরিবার ও সমাজে চলা সহজতর হবে।
উচ্চাকাঙ্খা পরিহার


জীবন যত সাদামাটা ততই দুনিয়া জীবন সহজতর হবে! তাই, সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন ও সল্পে তুষ্ট থাকতে হবে! নবী ও সাহাবাদের জীবনী থেকে সাদামাটা জীবনে থেকে ধৈর্য ও কষ্টের পর ও আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান ও প্রশান্তির যে আলোকদীপ্ত জ্বলজ্বল করে, তা শিক্ষা নিতে হবে।
পরিবার ও সমাজ গঠনে আদর্শ নারীর ভুমিকা:
জন্মের সুচনালগ্ন থেকে একটি শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, বুদ্ধিমতা, দ্বীনি শিক্ষা সকল কিছুরই হাতেখড়ি হয় একজন মায়ের দ্বারা। একজন আদর্শ মা বিকাশ ঘটাতে পারে আদর্শ প্রজন্ম। মায়ের অনুকরনেই ছোট্ট শিশু দিব্যি বেরে উঠে! এখন, একজন নারীর আখলাক যদি উত্তম হয় এবং তিনি যদি দ্বীন পালনে সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন, তবে শিশু ও এসব শিখবে।


পক্ষান্তরে, একজন মায়ের মন্দ আচরন এবং মুর্খতা শিশুমনে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে! আবার, একজন ফুল টাইম জবহোল্ডার মা যতই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেয়ার টেকার রাখুক! বাচ্চার নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সাথে তার সহজাত প্রবৃত্তি হবে ঠিক সেই কেয়ার টেকারের অনুকরনে।
একজন কন্যাসন্তান হিসেবে মা বাবার অবাধ্য মেয়ে থেকে অবশ্যই বাবা মায়ের অনুশাসন মেনে চলা মেয়েসন্তান অত্যধিক উপকারী!
কথায় আছে, সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে!স্বামীর আনুগত্যে করা, পরিবারের সকলের দেখাশোনা করা, বিপদাপদে ধৈযধারন, সাংসারিক কাজকর্মে নিখুত বিচক্ষনতা, পরিবারের অসুস্থদের সেবা শুশ্রূষা প্রতিটি পদক্ষেপএকজন আদর্শ নারীই পারে সংসারে প্রশান্তি আনতে।


আত্নীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা, প্রতিবেশীদের খোঁজখবর রাখা, অসহায় দুস্থদের দান করা এসকল কিছুই তার উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য!
শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে আদর্শ নারী:
শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্র আদর্শ নারীদের হিতের বিপরীতে তা কিন্তু নয়! অনেকে মনে করে ইসলামে যেহেতু নারীদের বাসায় সংসারের কাজ করতে বলেছে, তবে নারীদের উচ্চশিক্ক্ষার কি দরকার! নারীরা শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে মানবকল্যানে অত্যাধিক ভুমিকা রাখতে পারে৷
নারী চিকিৎসক ও নার্স: আজকাল গ্রামে গন্জে এখনও নারী চিকিৎসক ও নার্সের বড়ই অভাব।ফলে, কঠিন পর্দা করা বোনেরা পুরুষ ডাক্তারের কাছে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে আদর্শ নারীরা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে, নারী পেশেন্টদের চিকিৎসা দিয়ে দ্বীনি কাজে নিজেকে সামিল করতে পারে।
মহিলা শিক্ষিকা: আজকাল গার্লস স্কুল, মাদ্রাসা কিংবা কলেজগুলোতে মহিলা শিক্ষিকার বড়ই অভাব! শিক্ষকদের কাছে অনেক হেনস্তার কথাও প্রায়শই পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে পাওয়া যায়! এভাবে, সমাজে শৃঙ্খলতা, শালীনতা ও মেয়েদের নিরাপত্তা জোরদার করতে নারীরা পারে পর্দার আড়ালে থেকে পাঠদানে নিজেকে নিযুক্ত করতে।


একজন নারী কুরআনের আলেমা ও হাফেজা হয়ে মাদরাসায় পাঠদানের পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষিত বোনদের মাঝে কুরআন ও দ্বীনি শিক্ষার প্রচারে অকল্পনীয় অবদান রাখতে পারে।
উদ্যোক্তা: সামাজে দুস্থ, বিধবা ও অসহায় নারীদের নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে সমাজের দুস্থ মানুষদের জন্য উপকারে আসতে পারে একজন আদর্শ নারী।
দর্জি: একজন আদর্শ নারী অবশ্যই চাইবেনা তার শরীরের মাপ একজন পুরুষ জানুক! নিজের পোষাক নিজের স্বাছন্দ্য অনুযায়ী সেলাই করে রুচিশীলতার পরিচয় যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি অন্যবোনদের পোষাক সেলািয়ে পাওয়া যাবে বাড়তি উপার্জনও! আর মুল উদ্দেশ্য যদি হয় কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তবে দুনিয়া ও আখিরাতে তো উপহার থাকছেই!
পরিশেষে,

 যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দুনিয়া ও আখিরাত হারানো একজন মুমিনার বৈশিষ্ট্য হতে পারেনা। একজন আদর্শ নারী ই পারে পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কল্যানকর প্রজন্ম উপহার দিতে হবে। আদর্শ নারীর উত্তম আখলাক ও গুনাবলি হতে পারে আরও বেদ্বীন বোনদের দ্বীনে ফেরার মুল কারন! একজন মুসলিমাহ্ তার আদর্শের বলে পারিপাশ্বিক সকল স্থিরতা, অন্যায়, অবিচার রুখে দিতে পারে। পরিশেষে, রবের সন্তুষ্টি যে একজন আদর্শ নারীর ছায়াতল, যে ছায়াতলে আদশ নারী হতে পারে সকল কল্যানকর কাজের মুল পরিচালিকা!

Sunday, 15 December 2024

জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? 

জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? 

 


আমাদের বর্তমান আধুনিক মুসলিম সমাজে জন্মদিন পালন একটি ট্রেন্ড হিসাবে ধরা দিয়েছে। আধুনিক পশ্চাত্য জীবনযাপনের অনুসরণে সাধারণ মুসলমানগণ নিজের অজান্তেই পা দিচ্ছে পাপের গন্তব্যে। কেননা এই জন্মদিন পালন কখনোই ইসলামী সংস্কৃতি নয়। তাই আসুন দেখি কুরআন এবং হাদিসের আলোকে কেন ইসলাম জন্মদিন পালন সমর্থন না


জন্মদিনের ইতিহাস
লিখিতভাবে জন্মদিনের কথা প্রথম জানা যায় বাইবেলের জেনেসিস অধ্যায় থেকে। মিশরের ফারাওদের জন্মদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ছিল মিশরে। বাইবেলে জন্মদিনের কথা বলা থাকলেও সেটি জন্মের দিন নাকি সিংহাসনে বসার দিন সেটি নিয়ে ইজিপ্টোলজিস্টদের মাঝে বিতর্ক রয়েছে।
প্রাচীন মিশরে ফারাওদেরকে ঈশ্বর মনে করা হতো আর সিংহাসনে বসার দিনটিকে মনে করা হতো তাদের মানুষ থেকে ঈশ্বরে রূপান্তরের দিন। তাই ঠিক কোন দিনটির কথা বলা হচ্ছে সেটি পরিষ্কার বোঝা না গেলেও ফারাও এর জন্মের দিন কিংবা ‘ঈশ্বরে রূপান্তরের দিনটিকে’ বেশ ধুমধামের সাথেই পালন করা হতো। বাইবেলে বর্ণিত এই ফারাও ছিলেন ইউসুফ (আ) এর সময়ের ফারাও, যে সময় ইউসুফকে (আ) যৌন নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। বাইবেলের বর্ণনা থেকে জানা যায়, “তৃতীয় দিনটি ছিল ফারাউনের জন্মদিন। ফেরাউন তার সব কর্মকর্তাদের জন্য ভোজের আয়োজন করেন। ফেরাউন তার মদ-পরিবেশক ও রুটি প্রস্তুতকারককে ক্ষমা করে দিলেন”। [ওল্ড টেস্টামেন্ট, জেনেসিসঃ ৪০-

সে সময়ে সাধারণ মানুষদের জন্মদিন পালনের কোনো তথ্য ধর্মীয় কিংবা সাধারণ ইতিহাসে পাওয়া যায় না। ইউরোপেও জন্মদিন পালন শুরু হয় গ্রীক দেবি আর্টেমিসের জন্মদিনে চাঁদ আকৃতির কেক উৎসর্গ করে। ঠিক কীভাবে জন্মদিনের প্রথা গ্রীসে গিয়েছে সেটা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় মিশরীয়দের ফারাওয়ের জন্মদিন পালন করার রীতি অনুসরণ করে গ্রীকরা তাদের দেব-দেবীদের জন্মদিন পালন করা শুরু করে। আসুন আমরা দেখি বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসে কীভাবে জন্মদিন পালন শুরু হয়েছে।
ইহুদি ধর্মে জন্মদিন!


ইহুদি ধর্মে মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় সজনদের জমায়েত করে ধর্মীয়ভাবে আনন্দ উদযাপনের সাথে জন্মদিন পালনের জন্য। ইহুদিদের অনেক রাবায়ি (আলেম) মনে করেন কোন ব্যক্তির জন্য তার জন্মদিনটি তার জন্য দোয়া কবুলের একটি বিশেষ দিন। আধুনিক জন্মদিনে ধর্মনিরপেক্ষ অনেক বিষয় থাকলেও এটা ধর্মীয় আচারেরই সার নির্যাস।


হিন্দুধর্মে জন্মদিন!
হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোক বিশ্বাস অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ জুলাই। এ দিনটি জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। ভাদ্র ও মাঘ মাসের শুক্লা চতুর্থীকে গণেশ চতুর্থী বলা হয়। গণেশ চতুর্থী বা গণেশোৎসব যা হিন্দু দেবতা গণেশের বাৎসরিক পূজা-উৎসব। হিন্দু বিশ্বাসে এই দিনটি গণেশের জন্মদিন।

 হিন্দু ধর্মে দ্বাদশ অথবা ত্রয়োদশ বছরে জন্মদিন পালিত হয় ‘পৈত পরিধান উৎসব’ হিসেবে। বয়স পূর্তিতে শিশু একটি বড় সূতার কুণ্ডলী কাঁধের একপার্শ্বে ঝুলিয়ে রেখে পরিধান করে। এছাড়াও, এই উৎসবটি উপনয়ণ নামে স্বীকৃত। হিন্দুদের বর্ণপ্রথায় উচ্চতর বর্ণ হিসেবে ব্রাহ্মণ পরিবারের সংস্কৃতিতে এ উৎসবটি মূলতঃ বালকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।


বৌদ্ধধর্মে জন্মদিন
আমরা সবাই বুদ্ধ পূর্ণিমার কথা জানি। বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। বৌদ্ধধর্ম মতে এই পবিত্র তিথিতে বুদ্ধজন্মগ্রহণ করেছিল, বোধি বা সিদ্ধিলাভ করেছিল এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিল।
এই দিনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা স্নান করে, শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকে। ভক্তরা প্রতিটি মন্দিরে বহু প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করে, ফুলের মালা দিয়ে মন্দিরগৃহ সুশোভিত করে বুদ্ধের আরাধনায় নিমগ্ন হয়। এছাড়া বুদ্ধরা এই দিনে বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেদ প্রার্থণাও করে থাকে।


খৃষ্টানধর্মে জন্মদিন
ক্রিস্টমাস খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট চার্চের অনুসারীরা যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এ উৎসব পালন করে। খ্রিস্টিয় ২০০ সাল থেকে এ উৎসব পালন শুরু হয়। ৩৫৪ সালে দিনটিকে যিশুর জন্মদিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এ ঘোষণা ৪৪০ সালে পোপ স্বীকার করেন। মূলত পৌত্তলিক রোমানদের উৎসবের বিপরীতে ক্রিস্টমাস পালন শুরু হয়। মূলকথা বলতে গেলে জন্মদিনের ব্যাপক প্রচলন খৃষ্টানদের মাধ্যমেই ছড়িয়েছে।


সামগ্রিকভাবে জন্মদিন পালনের ইতিহাস
ধর্মীয় বেড়াজালের বাইরে প্রথম জন্মদিনের কথা জানা যায় রোমে। রোমে সাধারণ জনগণ পরিবার ও বন্ধুদের জন্য জন্মদিনের পার্টি শুরু করে। এমনকি বিশেষ ক্ষমতাশালী ও সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্মদিনে সরকারিভাবে ছুটিও চালু হয়। তবে জন্মদিন পালন শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই ছিল। নারীদের জন্মদিন পালনের কোনো রীতি তখনো চালু হয়নি।
প্যাগান সমাজে জন্মদিন পালনের রীতি থাকলেও সেমেটিক সমাজে জন্মদিন মোটেও স্বাভাবিক নিয়ম ছিল না। বরং প্যাগানদের থেকে উৎপত্তি হবার কারণে ইহুদী ও খ্রিস্টানরা প্রথমদিকে জন্মদিন পালনকে শয়তানের রীতি হিসেবে মনে করতো।


তবে খ্রিস্টানদের ধ্যানধারণা পাল্টাতে থাকে চতুর্থ শতাব্দীর পর থেকে। প্রথমদিকে কোনো নিয়ম না থাকলেও চতুর্থ শতাব্দীর পর থেকে ঈসা (আ.) এর জন্মদিন পালন শুরু করে খ্রিস্টানরা। এর ফলে খ্রিস্টান চার্চগুলো জন্মদিন পালনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকে। প্রথমদিকে ধর্মীয় চরিত্রগুলোর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষেরাও কেউ কেউ জন্মদিন পালন শুরু করে। বর্তমানে ক্রিসমাস পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।
এটা কাদের সংস্কৃতি?

উপরোক্ত জন্মদিনের ইতিহাস থেকে আমরা এটা সুস্পষ্টভাবে জানতে পারলাম যে, এই সংস্কৃতির আশেপাশে ইসলামের নাম গন্ধও নেই। অর্থাৎ এটা স্পষ্টতই বিধর্মীদের আচার অনুষ্ঠান। যা তাদের মূলত ধর্মীয় অনুষ্ঠানই। পরবর্তীতে তাদের এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
যার ফলে এই সংস্কৃতি বিশ্বের সব দেশ এবং জাতির মধ্যে তারা খুব সুক্ষ্মভাবে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। এতে করে তাদের দুটি লাভ সাধিত হয়েছে। এক হচ্ছে আর্থিক। অর্থাৎ জন্মদিন পালন নিয়ে যাবতীয় সামগ্রীর ব্যবসা। দুই হচ্ছে তাদের ধর্মীয় আচার এবং ধর্মবিশ্বাসকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসে জন্মদিন!
ইসলামে জন্মদিন বা জন্মবার্ষিকী পালন বলতে কিছু নেই। বছরের যে দিনটিতে কেউ জন্ম গ্রহণ করেছে, সেই দিনকে তার জন্য বিশেষ কোন দিন মনে করা বা এই উপলক্ষ্যে আনন্দ-ফুর্তি করা অথবা ইবাদতের উদ্দেশ্যে কোন আমল করার কথা কুরআন-সুন্নায় কোথাও কিছু পাওয়া যায়না।


খাইরুল কুরূনেও (সাহাবী ও তাবেঈন রা. এর স্বর্ণযুগ) জন্মদিন পালনের কোন অস্তিত্ব ছিল না। যদি জন্মদিন বলতে ইসলামে কোন কিছু থাকত তাহলে হাদীস ও ইতিহাসের কিতাব গুলোতে সাহাবী ও তাবেঈন রা. এর জন্মদিন পালনের কোন না কোন ঘটনা থাকত। অথচ তাদের জন্মদিন পালনের কোন প্রমাণ কোন সূত্রেই পাওয়া যায়না।

এমন কি জন্মদিনের বিশেষ কোন গুরুত্বই তাদের কাছে ছিল না। এর প্রমাণ মেলে তাদের জীবনী পর্যালোচনা করলে। সাহাবা ও তাবেঈন রা. এর জীবনী দিকে লক্ষ্য করলে এটা স্পষ্ট হয় যে, তারা কে কোন সনে জন্মগ্রহণ করেছেন তা কারো কারোটা জানা গেলেও কোন মাসের কোন তারিখে জন্ম করেছেন তা জানা খুবই দুস্কর।
এমনকি আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আওয়াল মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন এটা নিশ্চিত ভাবে জানা না থাকায় সীরাতপ্রণেতাদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়।


ইসলামে জন্মদিন পালন গুরুত্ববহন করলে কমপক্ষে সে সময় সাহাবিদের সন্তান সন্তুতি জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের জন্মতারিখ সংরক্ষিত থাকত। তারা জন্মদিন ঘটা করে পালন করতেন। অথচ জন্মদিন পালন তো দূরের কথা তাদের জন্মতারিখই ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয়নি।
এটা যদি ইসলামে পালনীয় বিষয় হতো বা গুরুত্ব বহন করত তাহলে অবশ্যই তারা তাদের সন্তানদের জন্ম তারিখ সংরক্ষণ করতেন। এর মাধ্যমে এ কথা প্রমাণিত হয় জন্মদিন বলতে বর্তমানে যা বুঝায় তার অস্তিত্ব কখনোই ইসলামে ছিল না।
কেন আমরা পালন করবো না!
ইতিমধ্যে আমরা তথ্য প্রমাণাদি দ্বারা এটা বুঝতে পেরেছি যে, জন্মদিন পালন কখনোই ইসলামী সংস্কৃতি নয়। সুতরাং এটা যেকোনো মুসলিমের জন্য হারাম। কেননা ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার ধর্ম। ইসলামে অপূর্ণ বলতে কোনো শব্দ নেই। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল সা. মানব জীবনের এমন কোনো দিক পরবর্তীতের জন্য বাকি রেখে যাননি। ঠিক এই জন্মদিন নিয়েও ইসলামের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,

1em
“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম”।[ সুরা মায়েদা ৫:৩ ]
অর্থাৎ আল্লাহ যখন দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলেন সেখানে নতুন করে কোনো কিছু (যা মূল নীতির সাথে সাংঘর্ষিক) যুক্ত হওয়ার অবকাশ নেই। আল্লাহ আরো বলেন, “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষথেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য সাথিদের অনুসরণ করনা। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর”। (সূরা আ’রাফঃ৩)
এখানে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, যা তিনি আমাদের অর্থাৎ মুসলিমদের নির্ধারণ করে দিয়েছেন তারই শুধুমাত্র অনুসরণ করা যাবে। তা বাদ দিয়ে অন্য কোনো জাতি ধর্ম গোষ্ঠীকে অনুসরণ করা যাবে না। আল্লাহ আরো উল্লেখ করেন, “এরপর আমি আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের উপরঃ সুতরাং আপনি এর অনুসরণ করুন, মূর্খদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেননা”।(সূরা যাসিয়াঃ১৮)
সুতরাং আল্লাহ আমাদের যে নির্দিষ্ট নিয়মকানুনের মধ্যে একটি জীবনবিধান দিয়েছেন  সেই বিধানেরই অনুসরণ করাই একজন মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। যেহেতু জন্মদিন পালন বা বার্ষিক কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের ইসলামের ইতিহাসে নেই। সেহেতু এটা পালন করা জায়েজ নয়। তারপরও আমরা যারা উদারপন্থী মুসলমান তাদের এটা মেনে নিতে কষ্ট হবে। তাই তাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শিক মহামানব রাসুলসাঃ এর প্রসিদ্ধ হাদীস।


হযরত ইবনে উমার রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৪০৩১)
অর্থাৎ কেউ ইসলামের আদর্শের বাইরে গিয়ে অন্য কোনো আদর্শ বা সংস্কৃতিকে পছন্দ করে লালন করে তাদের অনুসরণ অনুকরণে চলে। তবে সে ঐ দলের বা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হলো। 
এখন যদি কেউ বলে আমি জন্মদিন হিসেবে শুকরিয়া স্বরূপ কিছু আমল (হুজুরদের দিয়ে দোয়া, একটি নির্দিষ্ট দিনে মানুষকে খাওয়ানো, কেক কাটা ইত্যাদি)  করবো তাহলে এই ব্যাপারে কথা হলো, ইসলামে যে বিষয়টি নেই তা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করা বিদআত। যা আল্লাহ্ ও রাসূল সা. কতৃক সরাসরি প্রত্যাখ্যাত। হাদীস শরীফে এসেছে –হযরত আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেউ আমাদের এ শরীয়তে সংগত নয় এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। (বুখারী, হাদীস  ২৬৯৭)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন কোন কর্ম করলো যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (মুসলিম হাদিস ৪৩৮৫)
হযরত যাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার মাঝে বলতেন, যাকে আল্লাহ হেদায়াত দেন তাকে ভ্রষ্টকারী কেউ নেই। আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য হেদায়াত কারী কেউ নাই। নিশ্চয়ই সবচেয়ে খাটি কথা হল আল্লাহর কিতাব ও সর্বোত্তম দিশারী হল মুহাম্মাদ (সা:) এর সুন্নাত এবং সর্ব নিকৃষ্ট কর্মহল (দ্বীনের মাঝে) নতুন কিছু উদ্ভাবন করা। প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত; প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামী। (সুনানে নাসাঈঃ১৫৭৭)


সুতরাং নিজ থেকে শুকরিয়ার ইবাদতের জন্যও কেউ কিছু করলে সেটা ইসলাম সমর্থন করে না। যা ইসলাম সমর্থন করে না তা পালন করলে আমরা বিদআত করছি। আর এই বিদআতই ধীরে ধীরে একজন মুসলমানকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। আল্লাহ আমাদের বিদআত সম্পর্কে  জানার বোঝার সুযোগ দিন এবং সঠিক  আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন। 
বিষয়: জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? 

বীরত্বের প্রভাতি । 

বীরত্বের প্রভাতি । 

 


বাংলার বুকে জাগ্রত প্রভাতে,বীরের সন্তান, চলছে রণপথে।হৃদয়ে দাউ দাউ আগুন,স্বপ্নে আঁকা মুক্তির দিগন্ত।
পড়ার টেবিল ছেড়েপথে নামলো তাঁরা,প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে,অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে।শান্তির পতাকা হাতে,দাঁড়ায় সম্মুখে,বাংলার মাটিতে,সঞ্চারিত নতুন এক আলো।
তাদের সাহসী কণ্ঠে 
বাজে বিজয়ের সুর,অন্যায় বিরোধী প্রতিবাদ,দুর্বার গর্জন, স্বপ্নে উজ্জ্বলশান্তির আকাশ,প্রতিটি পদক্ষেপে জাগেদৃঢ় সংকল্পের প্রকাশ।

 তরুণদের এই সুরবাংলার হৃদয়ের ভাষা,তাদের বীরত্বে জ্বলে,আগামী দিনের দীপশিখা।তারা গড়বে ইতিহাস,গৌরবময় কাহিনী,বাংলার ভবিষ্যৎ,তাদের স্বপ্নের রহস্য।
বীরত্বের গাথায় জাগুকনতুন প্রভাত,স্বাধীনতা ও ন্যায়েরচূড়ান্ত অঙ্গীকারে।বাংলার আকাশে উড়ুকশান্তির শুভ্র পায়রা,তরুণদের সংগ্রামে, বিজয়ের মহিমাসঞ্চারিত হোক।

এক ভাগ্যবতী মা (কিশোর বালকের যুদ্ধের গল্প)

এক ভাগ্যবতী মা (কিশোর বালকের যুদ্ধের গল্প)

নিঝুম নিস্তব্দ রজনী । আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। ঊর্ধ্বলোকের বাতায়ন খুলে তারকা রাজি মিটমিট করে হাসছে। মেঘমালা ডানা মেলে উড়ে চলে যাচ্ছে দূরে, বহু দূরে, অজানালোকে। স্বর্গীয় সুষমায় সিক্ত পবিত্র মদীনা নগরী তখন ঘুমে সম্পূর্ণ অচেতন । ক্রমে রাত গড়িয়ে সুবহে সাদিক হল ।
 মুয়াজ্জিনের সুমধুর কণ্ঠ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। মুসলিম নর-নারীরা সালাতে ফজর আদায় করল। সকালের সোনালী রবির আলোকচ্ছটায় পূর্বাকাশ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল । রাতের আধার এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। লোকজন নামায শেষে তেলাওয়াত অযীফা নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক এমন সময় আবছা
 অন্ধকারের বুক চিরে একটি সুউচ্চ কন্ঠস্বর ছড়িয়ে পড়ল। মদীনার রাস্তাঘাট, মাঠ-ময়দান, অলিগলিসহ সকল স্থানেই পৌঁছল- হে মুসলিম মুজাহিদরা! হে রাসূলের জানবাজ সাহাবীরা! পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের নাম-নিশানা চিরতরে মুছে ফেলার জন্য সমস্ত কুফুরী শক্তি একত্রিত হয়েছে। বসে থাকার সুযোগ নেই ৷ এক্ষনি জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়। হযরত বেলাল (রা.) এর এ আচানক আহবানে অচেতন মদীনা নগরী শিহরিয়ে উঠল। প্রাণচাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল প্রতিটি ঘরে ঘরে। জিহাদে শরীক হয়ে শহীদ কিংবা গাজী হওয়ার এক দুনির্বার আকাংখা সকলের মাঝেই তীব্র রূপ ধারণ করল । এক বিধবা মহিলা। জীর্ণ কুটিরে স্বীয় পুত্রকে বুকে জড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হযরত বিলাল (রা.)-এর বুলন্দ আওয়াজ কর্ণ কুহরে পৌঁছতেই তার নিদ্র৷ যেন শত সহস্র মাইল দূরে পালিয়ে যায় । জিহাদের আহবানে তার হৃদয়টা ছ্যাৎ করে উঠে। গরম ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু মনের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে।

 হৃদয় কন্দরে ভেসে উঠে প্রিয়তম স্বামীর অন্তিম মুহূর্তের স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাগুলো। মনে পড়ে ঐ সময়ের কথা, যখন তিনি স্বামীর হস্তে তুলে দিচ্ছিলেন চকচকে শানিত তরবারী, আর নিজ হাতে পড়িয়ে দিচ্ছিলেন লৌহবর্ম । তারপর অশ্বের পদাঘাতে ধুলিঝড় উড়িয়ে তিনি চির বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিলেন বদর প্রান্তরে। কিন্তু তারপর……..? তারপর তিনি ফিরে এসেছিলেন শহীদের খুন রাঙ্গা আবরণে । অধরে লেগেছিল জান্নাতী হাসির অপূর্ব ঝলক। প্রতিটি রক্ত কণিকা থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল বেহেশতী খুশবু । শহীদের অমীয় সুধা পান করে তিনি আজ দূরে, বহু দূরে। জান্নাতের মনোরম উদ্যানে । কিন্তু আমি? আমি বুঝি চির বিরহিনী, চির দুঃখিনী। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কল্পনার সাগরে
 সন্তরণের পর তার চক্ষুদ্বয়ে নামল অশ্রুর বান। ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। মনে মনে আফসোস করে বললেন, হায়! যদি আমার পুত্র সন্তানটি বড় হত, তবে আজ তাকে জিহাদে পাঠিয়ে মুজাহিদের মা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতাম। ফোঁপানো কান্নার সকরুণ সুর আর বাধভাঙ্গা অশ্রুর উষ্ণ পরশে এতিম বালকটির ঘুম ভেঙ্গে গেল। মায়ের চেহারা পানে চেয়ে হতবিহবল হয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরল সে। তারপর কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলল, মা! তুমি কাঁদছ? কি হয়েছে তোমার? এতটুকু বলে আবেগের আতিশায্যে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এল। ওষ্ঠধর কাঁপতে লাগল । শত চেষ্টা করেও আর কিছু বলতে পারল না । মাও ছেলেকে বুকে নিয়ে স্নেহের আবেশে কপালে চুমু খেলেন । গভীর মমতায় জড়িয়ে ধরে স্বস্নেহে মাথার চুলগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন- বাবা! আজ ইসলামের বড় দুর্দিন। এই মাত্র জিহাদের আহবান এসেছে মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে ৷ সমস্ত কাফেররা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। তারা চায় ইসলাম ও মুসলমানদের নাম নিশানা পর্যন্ত মুছে ফেলতে। তোমার আব্বু বেঁচে থাকলে তাকে জিহাদে পাঠাতাম। কিন্তু তিনি তো বেঁচে নেই। আর তুমিও অনেক ছোট । এ দুঃখেই আমি কাঁদছি । বালকটি শান্ত অথচ গভীর কন্ঠে বলল, এজন্য কি কাঁদতে হয় মা ! আমি ছোট বলে আমাকে অবজ্ঞা করবেন না। কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করার হিম্মত আমার আছে। অনুগ্রহ করে এখনই আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নিয়ে চলুন। তিনি যদি আমাকে জিহাদের জন্য কবুল করেন তবে তো আমাদের মহা সৌভাগ্য। আর বিলম্ব নয়। চলুন, এখনই আমরা রওয়ানা দেই। তার চোখে মুখে প্রাণোচ্ছলতার ছাপ । 
ছেলের কথায় বিধবা মায়ের শুষ্ক ঠোঁটে খেলে গেল এক টুকরো স্বর্গীয় হাসি। তৃষিত হৃদয় কাননে সঞ্চারিত হল উৎফুল্লতায় ভরা শান্তির জোয়ার। আনন্দের হিল্লোল বয়ে চলল সমস্ত দেহ জুড়ে। স্নেহের আতিশয্যে চুমোয় চুমোয় ভরে দিল তার সমস্ত মুখমন্ডল । বাদ ফজর। মসজিদ চত্বরে অবতারণা হয় এক অপূর্ব দৃশ্যের । চারিদিক থেকে প্রবীন মুজাহিদরা সমবেত হয়েছেন। সাথে সাথে রয়েছেন নবীন মুজাহিদরাও। তাদের মুখে স্নিগ্ধ হাসি। বুকে অসীম সাহস। হৃদয়ে উচ্ছসিত উদ্যম। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ তাদের সেনাপতি। আল্লাহপাক পরিচালক। সুতরাং তাদের বিজয় রুখবে কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন। শুরু হল বাছাই পর্ব। যারা ছোট, বয়সে কিশোর, তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হল। অত্যন্ত আদর সোহাগ করে, বুঝিয়ে সুজিয়ে। বাছাই পর্ব এখনও শেষ হয়নি। বিধবা মহিলা তার সন্তানকে নিয়ে রাসূলের দরবারে উপস্থিত হলেন। আশা-নিরাশার দুলায় দুলছেন তিনি। আলো-আধারের এক অপূর্ব মিলন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার মুখাবয়বে। বললেন আবেগ জড়িত কণ্ঠে ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ ছেলেটি আমার জীবনের একমাত্র সম্বল । আমার আর কোন সন্তান নেই। এর পিতা বদরের যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। আমার হৃদয়ের একমাত্র তামান্না, একে আপনি জিহাদে নিবেন। যেন কেয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর সামনে কেবল মুজাহিদের স্ত্রী হিসেবেই নয়, মুজাহিদের মা হিসেবে দন্ডায়মান হতে পারি। বিধবা মহিলার কথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ মন্ডলে মুচকী হাসির একটা বিদ্যুৎ চমক খেলে গেল। মুগ্ধ হলেন সমবেত মুজাহিদরাও। ভাবলেন, ত্যাগের কি অপূর্ব নযীর। বদর যুদ্ধে স্বামী শহীদ হয়েছেন। এখন আবার কলিজার টুকরা একমাত্র সন্তানকে জিহাদের জন্য নিয়ে এসেছেন। দ্বীনের জন্য এ কুরবানী সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে । পিতার শাহাদাতের কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদর করে ছেলেটিকে কাছে টেনে নিলেন। স্নেহার্দ্র হাত মাথায় বুলিয়ে দিলেন। কপালে চুমো খেয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন– তুমি এখনো ছোট, তাই না? আরেকটু বড় হও। তোমাকে
অবশ্যই জেহাদে নেব, কেমন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শুনে ছেলেটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! রান্না করার সময় আম্মুকে দেখেছি, প্রথমে তিনি ছোট ছোট লাকড়ীগুলো চুলোয় আগে দেন৷ আমি চাই, আমাকেও ছোট লাকড়ীর ন্যায় শত্রু পক্ষের সম্মুখে ঢাল হিসেবে সর্বাগ্রে পেশ করবেন । ছেলেটির বুদ্ধিদীপ্ত কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্মিত হলেন। অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি মেলে ক্ষণকাল তাকিয়ে রইলেন তার নিষ্পাপ মুখের দিকে।

 একরাশ প্রশান্তিতে ভরে উঠল তার হৃদয়-মন । বললেন বিধবা মহিলাকে লক্ষ্য করে- যাও হে ভাগ্যবর্তী! আল্লাহ তোমার ছেলেকে কবুল করেছেন। তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি কিয়ামত দিবসে মুজাহিদদের মায়ের কাতারেই থাকবে।আজকের মায়েরা নিজ নিজ কলিজার টুকরা সন্তানকে দ্বীনের জন্য কুরবানী দিতে প্রস্তুত থাকুক- এই হোক এই ঘটনার মূল শিক্ষা।

Wednesday, 11 December 2024

বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল, যার দলীয় সংবিধান বা গঠনতন্ত্র দলটির উদ্দেশ্য,

বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল, যার দলীয় সংবিধান বা গঠনতন্ত্র দলটির উদ্দেশ্য,

 


বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল, যার দলীয় সংবিধান বা গঠনতন্ত্র দলটির উদ্দেশ্য, কাঠামো, কার্যক্রম এবং আদর্শ নির্ধারণ করে। জামায়াতের দলীয় সংবিধানে দলটির প্রতিষ্ঠা, সদস্য গ্রহণের শর্ত, সাংগঠনিক কাঠামো, নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

এখানে বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী দলের সংবিধানের মূল অংশগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

১. দলীয় উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী মূলত ইসলামী আদর্শ ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এর কিছু মূল লক্ষ্য:

  • ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা: দলটি একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে।
  • ইসলামী শিক্ষার প্রসার: জামায়াত জনগণের মধ্যে ইসলামী শিক্ষা প্রচার করে, যাতে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
  • ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠা: দলটি সমাজে সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
  • মুসলিম বিশ্বে ঐক্য সৃষ্টি: জামায়াত আন্তর্জাতিক স্তরে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

২. সাংগঠনিক কাঠামো

জামায়াতের গঠনতন্ত্রের মধ্যে দলের সাংগঠনিক কাঠামো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংগঠনটি একটি পিরামিডাল কাঠামোয় কাজ করে এবং শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সদস্য পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব রয়েছে।

প্রধান শাখাগুলি:

  • আমির: জামায়াতের প্রধান নেতা, যিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রদান করেন।
  • সেক্রেটারি জেনারেল: দলের প্রশাসনিক প্রধান, যিনি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
  • শূরা পরিষদ: এটি দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পরিষদ, যা দলীয় নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
  • মুরব্বি পরিষদ: একটি পরামর্শক পরিষদ, যা দলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে পরামর্শ প্রদান করে।
  • জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি: দলের শাখাগুলি দেশের বিভিন্ন স্তরে সংগঠিত থাকে, যা স্থানীয় স্তরের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

৩. সদস্য গ্রহণের শর্তাবলী

জামায়াতের সদস্য হতে কিছু শর্ত রয়েছে:

  • সদস্য হতে চাইলে ব্যক্তি একজন মুসলমান হতে হবে।
  • তিনি জামায়াতের আদর্শ, উদ্দেশ্য এবং গঠনতন্ত্রকে মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।
  • সদস্যদের নিয়মিতভাবে দলের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং দলীয় নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
  • সদস্যদের অবশ্যই ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে এবং ইসলামী আদর্শে জীবনযাপন করতে হবে।

৪. দলীয় কার্যক্রম

জামায়াত-ই-ইসলামী তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি নির্ধারণ করে থাকে। দলের কিছু প্রধান কার্যক্রম হল:

  • রাজনৈতিক কর্মসূচি: জামায়াত রাজনীতির মাধ্যমে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে। এটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং সংসদ ও স্থানীয় সরকারে প্রার্থী দেয়।
  • শিক্ষামূলক কর্মসূচি: জামায়াত মুসলিম জনগণের মধ্যে ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
  • সামাজিক সেবা: দলের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক সেবা, যেমন, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দান সহায়তা ইত্যাদি প্রদান করে থাকে।

৫. নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া

জামায়াতের গঠনতন্ত্রে নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে বর্ণিত। শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া সাধারণত পরবর্তী শূরা পরিষদের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন শূরা পরিষদের ভোটাভুটির মাধ্যমে।

৬. দলের নৈতিকতা ও বিধিনিষেধ

গঠনতন্ত্রে দলের সদস্যদের জন্য কিছু নৈতিক শর্তাবলী নির্ধারণ করা হয়:

  • সদস্যদের মধ্যে সৎ ও সঠিক আচরণ থাকতে হবে।
  • দলীয় আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে কখনো অবহেলা করা যাবে না।
  • দলের কাজে পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌজন্য বজায় রাখতে হবে।
  • সকল সদস্যকে দলের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

৭. গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রক্রিয়া

জামায়াতের গঠনতন্ত্রের যে কোনো সংশোধন বা পরিবর্তন করার জন্য শূরা পরিষদে আলোচনা এবং সম্মতির প্রয়োজন হয়। তবে, এমন পরিবর্তন বা সংশোধন অবশ্যই দলের মৌলিক উদ্দেশ্য এবং ইসলামী আদর্শের প্রতি অনুগত থাকতে হবে।

৮. দলীয় পন্থা ও সম্পর্ক

জামায়াত তার কার্যক্রমে নির্দিষ্ট কিছু পন্থা ও আদর্শ অনুসরণ করে। এদের মধ্যে রাজনৈতিক আন্দোলন, ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার এবং আন্তর্জাতিক স্তরে মুসলিম ঐক্য গঠন অন্যতম। দলটি পাকিস্তানের জামায়াত-ই-ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে।

৯. বিতর্ক এবং সমালোচনা

বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী বিশেষভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে পড়েছিল, যা দলটির জন্য একটি বড় বিতর্কের বিষয়। তবে দলটি এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করে এবং নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা কখনো স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে ছিল না।

উপসংহার

বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, যার গঠনতন্ত্র দলটির কার্যক্রম, আদর্শ এবং শাসন ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি করে। এর লক্ষ্য ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা, ইসলামী শিক্ষা প্রচার এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন। তবে, এর কার্যক্রম এবং গঠনতন্ত্র নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনাও রয়েছে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কার্যক্রম নিয়ে।


বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ও দেশের রাজনৈতিক অবস্থা

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ও দেশের রাজনৈতিক অবস্থা

 


বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ও দেশের রাজনৈতিক অবস্থা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ও জটিল। দেশের রাজনীতি, নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং সরকারব্যবস্থায় নানা পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তবর্তীকালিন সরকার বা তদূরবর্তী সময়ে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান, তা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে চলে

১. অন্তবর্তীকালিন সরকার: প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব

অন্তবর্তীকালিন সরকার বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত তখন গঠন করা হয় যখন সাধারণ নির্বাচনের আগের সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো সমঝোতা না করে নির্বাচন পরিচালনা করতে চায় না। অন্তবর্তীকালিন সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে পারে।

বাংলাদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং পরবর্তীকালে ২০১৮ সালের নির্বাচনও নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল, যেখানে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কট করেছিল এবং বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ অন্তবর্তীকালিন সরকারের দাবি ওঠে।

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে জল্পনা চলছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য দলের মধ্যে ক্ষমতা দখল ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক এবং চ্যালেঞ্জ চলমান।

২. বর্তমান সরকারের অবস্থান

আওয়ামী লীগ, বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল, তাদের অবস্থান দৃঢ় রেখেছে যে, নির্বাচনে অনিয়ম বা পক্ষপাতিত্বের কোনো সুযোগ নেই। তারা জোর দিয়ে বলছে যে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো এবারও একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। তাদের দাবি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে কাজ করছে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন।



৩. বিরোধী দলের অবস্থান

বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াত এবং অন্যান্য ছোট দলগুলো তাদের দাবি তুলে ধরেছে যে, নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ সরকারের গঠন অত্যন্ত জরুরি। তারা বলছে, একমাত্র একটি অন্তবর্তীকালিন সরকারই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে পারে। বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলো বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অনাস্থা প্রকাশ করেছে, দাবি করছে যে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে এককভাবে বিজয়ী হওয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করতে পারে। বিএনপি এবং তাদের সমর্থকরা ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করতে পারে অথবা ব্যাপক প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে।

৪. নির্বাচন কমিশন: চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নানা সময়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে, বিশেষ করে যখন অভিযোগ উঠেছে যে, নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছে পক্ষপাতিত্ব করছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা। তবে, বিরোধী দলগুলো প্রায়ই অভিযোগ করে থাকে যে, কমিশন তাদের প্রতি নিরপেক্ষ নয়। এটি নির্বাচনী পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

৫. জনগণের মনোভাব ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি

বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে নানা উদ্বেগ ও হতাশা বিরাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করছে। তরুণ সমাজ বিশেষত রাজনৈতিক বিরোধীতা ও নীরবতার কারণে হতাশ হয়ে উঠেছে।

বিশেষ করে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলছে, তা জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। তবে, সাধারণ জনগণ মূলত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আশা প্রকাশ করেছে, যাতে তাদের মতামত ও ইচ্ছা প্রতিফলিত হতে পারে।

৬. ভবিষ্যত সম্ভাবনা

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেহেতু অত্যন্ত জটিল, তাই ভবিষ্যত কী হতে যাচ্ছে তা বলা কঠিন। তবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করা যেতে পারে:

  • নির্বাচন ও গণতন্ত্র: যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে। তবে, সরকারের কাছে এই প্রক্রিয়া কতটা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হবে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।

  • বিরোধী দলের আন্দোলন: বিরোধী দলগুলো যদি নির্বাচনের আগে আন্দোলন তীব্র করে, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

  • আন্তর্জাতিক চাপ: আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারে, যা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে, আন্তর্জাতিক চাপ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কী প্রভাব ফেলবে, তা বলা কঠিন।

৭. উপসংহার

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং অনিশ্চিত। অন্তবর্তীকালিন সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার অভাব, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নির্বাচনী সংকট দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন তুলে ধরছে। তবে, একমাত্র একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি সমাধান হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে, যাতে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় এবং দেশটি উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে।

For details