উত্তপ্ত মরুভুমিতে যেমন পথিক তৃষ্ণা মেটাতে পানি খুজতে বার বার ব্যর্থ হয়, ঠিক তেমনি নারীর উন্নয়নের জোয়ারে বিশ্ব ভাসলেও আদর্শ নারীর দেখা পাওয়া বড় দায়! সমাজ আজ আপেক্ষিকভাবে বৈষম্য দুর করতে গিয়ে পুরুষের চেয়ে নারীর তিনগুন সম্মানকে কমিয়ে এনেছে সমানতার কাঠগোড়ায়! ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে একজন নারীর সম্ভ্রান্ত পরিচয়, প্রকৃত মুমিনা হওয়ার স্পৃহা, একটি আদর্শ প্রজন্ম উপহার পাওয়ার ভবিষ্যৎ ও!
আজ মুল্যবান মুমিনা হয়ে পড়েছে পথের ধারে হিংস্র মানুষদের লোভ লালসা পুরনের চাহিদা বস্তু! আজ তাদের আদর্শ সো কল্ড পশ্চিমা বিশ্বের সংস্কৃতি! ফলে সমাজে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে মেয়েদের উচ্ছৃঙ্খল চলাফেলা, পারিবারিক অশান্তি, পরকীয়া, ধর্ষন এমনকি ডিভোর্স সহ নানান রকম ফেতনা!
তাই, একজন মুসলিমাহ্ হিসেবে আমাদের নারীদের আদর্শ হওয়া চাই নবী রাসুলের যুগের বিবি ও মহিলা সাহাবীরা! ফেতনার যুগে একজন আদর্শ নারী হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি! একজন মুল্যবান মুসলিমাহ্ হয়ে দুনিয়া ও আখিরাত সুন্দর করতে আদর্শ নারী হয়ে উঠার দৃঢ় সংকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে ইসলাম জীবনব্যবস্থাইএকমাত্র সফলতার মুল মন্ত্র।
ইসলামে আদর্শ নারী কারা
যুগে যুগে মানুষকে সঠিকপথে পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়াতে নবী রাসুল প্রেরন করেছেন৷ তাঁরা ছিলেন ভ্রান্ত মানুষদের সঠিকপথে পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা পাঠানো পথপ্রদর্শক। একজন মানুষ হিসেবে আমাদের আদর্শ শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)! তবে, প্রশ্ন হচ্ছে একজন মুসলিমাহ্ হিসেবে আমাদের কোন নারীদের আদর্শ হিসেবে মানতে হবে? আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এমন বেশ কয়েকজন আদর্শ মুসলিম নারীদের কথা বলেছেন! এছাড়া, নবী-রাসুলদের জীবনী ও ইসলামি ইতিহাস থেকে আমরা আদর্শ নারী হিসেবে বহু সাহাবীদের দৃষ্টান্ত অনুধাবন করতে পারি! নিম্নে উল্লেখযোগ্য ৫ সাহাবীদের উত্তম আখলাক ও গুনাবলি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
হযরত খাদিজা (রা)
একজন মুসলিম নারীর আদর্শ হতে পারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর প্রথম ও প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা), যিনি আমাদের প্রিয়নবীর কঠিন সময়ের সঙ্গী ছিলেন! নারী হিসেবে প্রথম ইসলাম কবুলকারী ছিলেন হযরত খাদিজা(রা)! নব্যুয়ত ও তার পরবর্তী সময়ে মক্কার কাফেররা মহানবী (সা) এর বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র, মিথ্যা অপবাদ ও নির্যাতন চালাতো। অথচ, স্ত্রী খাদিজা (রা) এর উত্তম আখলাক ও ভালোবাসা সেসময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ব্যাথিত হৃদয়ে আবারও দৃঢ় বিশ্বাস যোগাতো৷ যেসময় গোটা দুনিয়া নবীজির বিরুদ্ধে ছিলেন, সেসময়ে হযরত খাদিজা তার পাশে ছায়া হিসেবে ছিলেন।
৪০ বছর বয়সের একজন বিধবা নারীর জন্য ২৫ বছরের একজন যুবকের হৃদয়ে এতই ভালবাসা সৃষ্টি করেছিলেন যার কারনে প্রিয়নবী তার মৃত্যুশোকে সবথেকে বেশি ব্যথিত হয়েছিলেন৷ তিনিই একমাত্র স্ত্রী যার জীবদ্দশায় মহানবী (সা) আর কোন বিবাহ করেননি। ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে হযরত খাদিজা (রা) এর স্বামী ভক্তি, বিপদে স্বামীর ঢাল, আর্থিক সহায়তা, হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ধৈর্যধারন, ইসলাম প্রচারনায় সাহস ও অনুপ্রেরনা দেওয়া সকল কিছুই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
হযরত আয়েশা (রা)
হযরত আয়েশা বিনতে আবু বকর সিদ্দিক কে বলা হয় উম্মুল মুমিনীন অর্থাৎ বিশ্বাসীদের মাতা! আয়েশা (রা) এর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, বিচক্ষন, বুদ্ধিমতী ও দ্বীনি ইলমে পান্ডিত্যের অধিকারী৷ তিনি রাসুল (সা) এর প্রিয়তমা স্ত্রী যিনি মহিলা সাহাবীদের মধ্যে সর্বোচ্চ হাদিস বর্নাকারী (সর্বমোট ২২১০টি)।এছাড়া তিনি তাফসির, হাদীস, ফিকহ ও আরবী সাহিত্যে অসাধারন ইলমের অধিকারী ছিলেন।মুনাফিকদের কুৎসা রচনায় আয়েশা (রা) চরিত্র ও পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কুরআন মাজীদে সুরা নুর এ আল্লাহ্ তা’আলা স্বয়ং তাঁর উত্তম ও আখলাক ও পবিত্রতা সম্পর্কে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন! সুবহানাল্লাহ!আয়েশা (রা) এর দানশীলতার ব্যাপারে ও নজির আছে। একজন কিশোরী স্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সংসার সামলানো, স্বামীর আনুগত্য, হাদিস শাস্ত্রে অবদান নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়।
হযরত ফাতেমা (রা)
হযরত ফাতেমা (রা) ছিলেন আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর পৃরিয় কন্যাসন্তান! যিনি হবে নারীদের জান্নাতের সর্দার! হযরত ফাতেমা (রা) এর জীবনীর যে বিষয়টি বড় শিক্ষামুলক তা হলো ‘ অল্পে তুষ্ট’ এবং “সাদামাটা জীবন”। হযরত ফাতেমা (রা) গৃহস্থালির সকল কাজ নিজে করতেন। তার সংসার জীবনে প্রচুর সংগ্রাম ও আর্থিক দুরাবস্থা থাকলেও দাম্পত্য জীবনে আলি রা) ও ফাতেমা রা এর অগাধ ভালোবাসা, সম্মান ও বিশ্বাসের নজীর চোখে পড়ে।
আরবের সম্ভ্রান্ত বংশ ও শ্রেষ্ঠ মানবের কন্যা হয়েও তিনি প্রাচুর্যের জীবনে গা ভাসান নি! বিশ্বনবী (সা) এর এই আদর্শ কন্যা আল্লাহর ইবাদতে সর্বদাই মশগুল থাকতেন। পর্দার ব্যাপারে তিনি ছিলেন বরাবরই কঠোর স্বভাবের! মৃত্যুর আগে তার পরিয়াদ ছিল, তাঁকে যেন রাতে দাফন করা হয় যাতে তার শরীরের অবয়ব কেউ বুঝতে না পারে- এই ছিল ফাতেমা (রা) এর পর্দা!
ফাতেমা রা ছিলেন খুবই দানশীল! তিনদিন ধরে অভাব অনটনের সময় এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক আসলে তিনি তাঁর গলার হার বৃদ্ধাকে বিক্রির জন্য দিয়ে দেয়! হযরত ফাতেমা রা পিতার আদুরের দুলালি তো ছিলেন সাথে পিতার আদেশ ও নিষেধ সবসময় মেনে চলতেন৷
হযরত আছিয়া (রা)
আছিয়া রা ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে বড় জালেম ফেরাউনের স্ত্রী! একজন পথভ্রষ্ট, জালেম ও কঠোর শাসকের পত্নী হওয়া স্বত্ত্বেও আছিয়া (রা) ছিলেন আল্লাহ্ ভীরু একজন নেককার মুমিনা। বিশাল প্রাসাদ, সম্রাজ্রের মাঝে থেকেও আছিয়া রা সর্বদাই ছটফট করতেন৷ তিনি লোভ লালসা , প্রাচুয্যের মাঝেও এক আল্লাহ্ তা’আলা এর একত্ববাদে সদা অটল ছিলেন। ফেরাউনের অত্যাচার,জুলুম, নির্যাতনে তিনি ধৈযহারা হয়ে পড়েননি। বরং সবদা আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন এভাবে-
হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ১১)
জান্নাতবাসীদের মধ্যে সুসংবাদপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ নারীদের মধ্যে আছিয়া রা অন্যতম! তার সততা, আল্লাহ্ ভীরু, ইমানের প্রজ্জলিত শিখা প্রতিটি মুমিনা নারীর জন্যই আদর্শ!
হযরত মরিয়ম (আ)
হযরত মরিয়ম (আ) ছিলেন ইসা (আ) এর মাতা, যার জীবনী থেকে আল্লাহর ফায়সালার উপর তাওয়াক্কুল, বিপদাপদে ধৈর্যধারন ও ইবাদতে মশগুল থাকার মত আদর্শ গুনাবলিগুলো প্রতীয়মান হয়। ইনি সেই মহান স্বত্তার জননী ও নারীদের আদর্শ যাঁর নামে মরিয়ম নামে আল্লাহ্ তা’আলা একটি সুরা নাযিল করেন।
মারিয়াম (আ) ছিলেন পুত পবিত্র, শালীন নারী এবং তিনি ঘরের এককোনে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তিনি পর্দা রক্ষা করতেন৷ এসকলকিছু আল্লাহ্র এতই পছন্দ হন যে তাঁর জন্য ইসা (আা) এর মত নবীকে মনোনিত করলেন!
আল্লাহর কুদরতে মরিয়ম (আ) কোনরকম স্বামী সঙ্গ ছাড়া শিশু ইসা (আ) কে জন্ম দেন৷ এই সময় তিনি ভয় ও সংশয়ে নিজের পবিত্রতা নিয়ে বারংবার আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। তার সংযম এত বেশি ছিল যে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষদের অপবাদ, তিরস্কার সহ্য করতে থাকেন। অত:পর আল্লাহ স্বয়ং তার পবিত্রতা নিয়ে স্বাক্ষ্য দেন-“আর সেই নারী যে তার পবিত্রতা রক্ষা করেছিল, আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে প্রাণ ফুঁকে দিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য নিদর্শন বানালাম।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯১)
নারীবাদী বা ফেমিনিষ্টদের নারী উন্নয়নের ফাঁদ:
ইতোপূর্বে আমরা প্রসিদ্ধ নারী সাহাবীদের জীবনী পরলেও বাস্তবে আমরা ভাবতে পারি তা এখন কি আর সে যুগ আছে? তখন নবী রাসুলের যুগে মানায়! এখন আধুনিক যুগ! এই যুগে নারীবাদীরা “নারী” শব্দটিকেই পুরুষ শব্দে বারবার বিভাজন করছে। একজন নারীকে এখন নারীবাদীরা শিখাচ্ছে কিভাবে পুরুষদের মত পোশাক পড়া যায়, কিভাবে তাদের সাথে কর্মস্থলে সমান তালে কাজ করা যায়! কিভাবে নারীরা নিজেদেরকে প্রদর্শনী রুপে সোশ্যাল মিডিয়া সহ রাস্তা ঘাটে প্রমোট করবে! এগুলোই নাকি নারী উন্নয়ন!
সংস্কৃতি ও বাঙালিত্বের দোহাই দিয়ে আজ সমাজে নারীদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ানো হচ্ছে। ইসলামে বিধি নিষেধের ধারে কিনারে তো তারা নেই ই, বোনদের আজ নারীবাদীরা নিজেদের কুলষিত পথে জড়িয়ে নিচ্ছে। এখন মা বোনেরা আর সংসার নিয়ে ভাবেনা! এখন মা বোনেরা সংসার সামলিয়ে জব ও করেনা! তারা হয়ে গেছে স্বাধীন কর্মজীবি! তারা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে! তারা স্বাধীনভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো জাহিলিয়াতি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় আগে যেমন শালীন মেয়ে দেখলে বোঝা যেত এই মেয়ে সম্ভ্রানৃত ঘরের ই মেয়ে। কিন্তু আজ রাস্তায় পশ্চিমা বিশ্বের হুবুহ চলাফেলরা হরহামেশাই দেখতে পাবেন।
আজকাল পন্যের নামিদামি বিজ্ঞাপন হোক অথবা হোক কোন গাড়ির শোরুমের ব্যানার! পুরুষ আর মডেল হয়না! মডেল হয় নারী! কারন নারীরাই পারে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে। দিনের পর দিন এভাবে নারীদেরকে নারী উন্নয়নের মিথ্যা ফাঁদে ফেলা হচ্ছে এবং তাদের সম্ভ্রম, শালীনতা, সৌন্দর্যের বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে।
বর্তমান ফেতনায় আদর্শ নারী হওয়ার উপায়:
আজকের সমাজে দ্বীনি পরিবেশ পাওয়া বড় দায়! ফেতনার এই যুগে নারীদের আদর্শ যখন হয়েছে পশ্চিমা সভ্যতার সংকৃতি তখন ছোট কন্যাসন্তান থেকে একজন বৃদ্ধা নারী ও অনিরাপদ সমাজে বাস করছে। সমাজের কাছে পর্দার আড়ালে থাকা একজন দ্বীনি বোন আগেকার বর্বরতার যুগের পুরুষশাসিত নারী! স্কুল কলেজ, ভার্সিটিতে হিজাব পরিহিতা নারীদের পড়তে হয় নানা রকম অসহায় অবস্থায়! এই সকল পরিস্থিতি দ্বীন ও ইলম চচা হতে পারে একমাত্র সমাধান! নিম্নোলিখিত কিছু উপায় মেনে চললে ফেতনাময় সমাজে দ্বীন ও আদর্শ দরে রাখা সম্ভব-
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা
দুনিয়াবি ও আখিরাতে সাফল্য অর্জনের চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য হওয়া! ফরজ বিধানসমুহের পালনে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথ আদায় করবে; রমজানের রোজা ঠিকভাবে রাখবে; (নিজেদের) সতীত্ব রক্ষা করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে; সে নারীকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ কর।’ (মুসনাদে আহমদ)।
সঠিক পর্দা পালন
শুধু হিজাব পেঁচিয়ে আধুনিক পর্দা কখনো আল্লাহর দেয়া নির্দেশ পালনের সাথী হতে পারে না! পরিপূর্ণ পর্দা করার পাশাপাশি ফ্রি মিক্সিং ও নন মাহরামের সাথে গল্পগুজব ও এখনকার কালচার। এই কালচারে আপনি নিজের রবের সন্তুষ্টি হারাবেন এবং ইসলাম সম্পর্কে একধরনের ফেতনা সৃষ্টি করবেন! তাই, সঠিক পর্দা পালনে তৎপর হতে হবে।
উত্তম আখলাক আয়ত্বকরন
উত্তম আখলাক সবদাই একজন মুমিনার আমলনামা ভারী করবে। পরিবার, প্রতিবেশী ও সকল স্তরে উত্তম আখলাকের কারনে একজন মুসলিমাহ্ সম্মানিত হতে পারে। এচাড়া আখিরাতে ও আছে এর উত্তম প্রতিদান-কেয়ামতের দিন মিযানের পাল্লায় সচ্চরিত্র সবচে বেশি ওজনী ও ভারী হবে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২০০২
দ্বীনি বান্ধবী বাছাইকরন
কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ! তাই প্রত্যেক যুবতী বা নারীর উচিত বেদ্বীন মানুষদের সঙ্গ ত্যাগ করে, আল্লাহভীরু বান্ধবীদের সাথে বন্ধুত্ব করা। যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরন হবে, তারাই দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত বন্ধু! এর ফলে পাপকাজ তেকে যেমন রেহাই পাওয়া যায় তেমনি আখিরাতের কথাও বেশি বেশি স্মরন হয়। ফলে ইমান দৃঢ় হবে
আত্ন সংযম ও ধৈযধারন
যুগপোযোগী কালচারকে না বলে নারী যখন ইসলাম অনুশাসনে চলবে বাধা বিপত্তি আসবেই! কটুক্তি, হিংসা, নিন্দা, অপবাদ দিয়ে আশেপাশের মানুষ কষ্ট দিবে। তাই, আল্লাহর পরীক্ষা ভেবে সকলকিছুতে ধৈর্যধারনক্ষমতা রাখতে পারলে নারীদের জন্য ব্যাক্তিগত, পরিবার ও সমাজে চলা সহজতর হবে।
উচ্চাকাঙ্খা পরিহার
জীবন যত সাদামাটা ততই দুনিয়া জীবন সহজতর হবে! তাই, সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন ও সল্পে তুষ্ট থাকতে হবে! নবী ও সাহাবাদের জীবনী থেকে সাদামাটা জীবনে থেকে ধৈর্য ও কষ্টের পর ও আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান ও প্রশান্তির যে আলোকদীপ্ত জ্বলজ্বল করে, তা শিক্ষা নিতে হবে।
পরিবার ও সমাজ গঠনে আদর্শ নারীর ভুমিকা:
জন্মের সুচনালগ্ন থেকে একটি শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, বুদ্ধিমতা, দ্বীনি শিক্ষা সকল কিছুরই হাতেখড়ি হয় একজন মায়ের দ্বারা। একজন আদর্শ মা বিকাশ ঘটাতে পারে আদর্শ প্রজন্ম। মায়ের অনুকরনেই ছোট্ট শিশু দিব্যি বেরে উঠে! এখন, একজন নারীর আখলাক যদি উত্তম হয় এবং তিনি যদি দ্বীন পালনে সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন, তবে শিশু ও এসব শিখবে।
পক্ষান্তরে, একজন মায়ের মন্দ আচরন এবং মুর্খতা শিশুমনে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে! আবার, একজন ফুল টাইম জবহোল্ডার মা যতই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেয়ার টেকার রাখুক! বাচ্চার নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সাথে তার সহজাত প্রবৃত্তি হবে ঠিক সেই কেয়ার টেকারের অনুকরনে।
একজন কন্যাসন্তান হিসেবে মা বাবার অবাধ্য মেয়ে থেকে অবশ্যই বাবা মায়ের অনুশাসন মেনে চলা মেয়েসন্তান অত্যধিক উপকারী!
কথায় আছে, সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে!স্বামীর আনুগত্যে করা, পরিবারের সকলের দেখাশোনা করা, বিপদাপদে ধৈযধারন, সাংসারিক কাজকর্মে নিখুত বিচক্ষনতা, পরিবারের অসুস্থদের সেবা শুশ্রূষা প্রতিটি পদক্ষেপএকজন আদর্শ নারীই পারে সংসারে প্রশান্তি আনতে।
আত্নীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা, প্রতিবেশীদের খোঁজখবর রাখা, অসহায় দুস্থদের দান করা এসকল কিছুই তার উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য!
শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে আদর্শ নারী:
শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্র আদর্শ নারীদের হিতের বিপরীতে তা কিন্তু নয়! অনেকে মনে করে ইসলামে যেহেতু নারীদের বাসায় সংসারের কাজ করতে বলেছে, তবে নারীদের উচ্চশিক্ক্ষার কি দরকার! নারীরা শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে মানবকল্যানে অত্যাধিক ভুমিকা রাখতে পারে৷
নারী চিকিৎসক ও নার্স: আজকাল গ্রামে গন্জে এখনও নারী চিকিৎসক ও নার্সের বড়ই অভাব।ফলে, কঠিন পর্দা করা বোনেরা পুরুষ ডাক্তারের কাছে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে আদর্শ নারীরা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে, নারী পেশেন্টদের চিকিৎসা দিয়ে দ্বীনি কাজে নিজেকে সামিল করতে পারে।
মহিলা শিক্ষিকা: আজকাল গার্লস স্কুল, মাদ্রাসা কিংবা কলেজগুলোতে মহিলা শিক্ষিকার বড়ই অভাব! শিক্ষকদের কাছে অনেক হেনস্তার কথাও প্রায়শই পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে পাওয়া যায়! এভাবে, সমাজে শৃঙ্খলতা, শালীনতা ও মেয়েদের নিরাপত্তা জোরদার করতে নারীরা পারে পর্দার আড়ালে থেকে পাঠদানে নিজেকে নিযুক্ত করতে।
একজন নারী কুরআনের আলেমা ও হাফেজা হয়ে মাদরাসায় পাঠদানের পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষিত বোনদের মাঝে কুরআন ও দ্বীনি শিক্ষার প্রচারে অকল্পনীয় অবদান রাখতে পারে।
উদ্যোক্তা: সামাজে দুস্থ, বিধবা ও অসহায় নারীদের নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে সমাজের দুস্থ মানুষদের জন্য উপকারে আসতে পারে একজন আদর্শ নারী।
দর্জি: একজন আদর্শ নারী অবশ্যই চাইবেনা তার শরীরের মাপ একজন পুরুষ জানুক! নিজের পোষাক নিজের স্বাছন্দ্য অনুযায়ী সেলাই করে রুচিশীলতার পরিচয় যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি অন্যবোনদের পোষাক সেলািয়ে পাওয়া যাবে বাড়তি উপার্জনও! আর মুল উদ্দেশ্য যদি হয় কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তবে দুনিয়া ও আখিরাতে তো উপহার থাকছেই!
পরিশেষে,
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দুনিয়া ও আখিরাত হারানো একজন মুমিনার বৈশিষ্ট্য হতে পারেনা। একজন আদর্শ নারী ই পারে পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কল্যানকর প্রজন্ম উপহার দিতে হবে। আদর্শ নারীর উত্তম আখলাক ও গুনাবলি হতে পারে আরও বেদ্বীন বোনদের দ্বীনে ফেরার মুল কারন! একজন মুসলিমাহ্ তার আদর্শের বলে পারিপাশ্বিক সকল স্থিরতা, অন্যায়, অবিচার রুখে দিতে পারে। পরিশেষে, রবের সন্তুষ্টি যে একজন আদর্শ নারীর ছায়াতল, যে ছায়াতলে আদশ নারী হতে পারে সকল কল্যানকর কাজের মুল পরিচালিকা!
0 coment rios: